করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের পুনর্বাসনে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে সরকার। এই তহিবল থেকে চার শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হবে।
রোববার ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ আয়োজিত ‘রেমিট্যান্স প্রবাহ এত টাকা আসছে কোথা থেকে’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এ কথা জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা বলেন, করোনার মধ্যে প্রবাসী আয়ের উর্ধ্বগতি হচ্ছে। এটা ভালো দিক। তার মানে এই নয় যে, প্রবাসীরা ভালো আছেন।
অনেক প্রবাসী চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে দুরবস্থার মধ্যে জীবন-যাপন করছেন। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তা না হলে বাড়বে সামাজিক অস্থিরতা।
বিশ্বব্যাপী হুন্ডি বন্ধ এবং সরকারের নগদ প্রণোদনা দেয়ার কারণে মূলত দেশে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রবণতা ধরে রাখার জন্য নগদ প্রণোদনা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেন বিশিষ্টজনেরা।
সংলাপে অংশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘প্রবাসী আয়ের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মাসেতুসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারছি। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের জন্য এখনো টেকসই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। এর অন্যতম কারণ, প্রবাসীদের জন্য শক্তিশালী প্লাটফর্ম নেই।’
এসডিজি প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মাণীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় পুরো বিশ্বের অর্থনীতি পর্যুদস্ত। কমে গেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। বিপুল সংখ্যক তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেননি।
‘প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে সবাই শঙ্কিত ছিলেন এবং এ কারণে বিশ্বব্যাপী প্রবাসী আয় হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেকর্ড করে চলেছে।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও ঝুঁকি আছে। কারণ, বিপুল সংখ্যক প্রবাসী ব্যক্তি চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে কর্মহীন হয়ে পড়েন। আবার অনেকেই যেতেও পারছেন না। এ অবস্থায় তাদের কাজের সুযোগ করে দিত হবে।’
প্রবাসীদের সুরক্ষায় অভিবাসন ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করেন সিপিডির সম্মাণীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
‘সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি’-এর চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, ‘কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন যে সব শ্রমিক, তাদের পুনর্বাসন করা সরকারের দায়িত্ব। একই সঙ্গে বিদেশে দ্রুততম সময়ে শ্রমিক পাঠানোর জন্য মিশনগুলোকে আরও সক্রিয় করতে হবে।’
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটিরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রবাসী আয়ের ওপর সরকারি দুই শতাংশ প্রণোদনা যদি আরও কিছুটা বাড়ানো যায়, তবে এই প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে।’
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘ফিরে আসা বাংলাদেশিদের জন্য ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ হিসেবে এই টাকা বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু ব্যাংকটির লোকবল এবং অবকাঠামোর অভাবে এই মুহূর্তে বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যেম টাকা দেয়া হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে।’
তিনি বলেন, এই টাকা পেলে ছোটখাট ব্যবসাসহ অন্যান্য আয়বৃদ্ধিমূলক কাজ করতে পারবেন বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা।
সংলাপে জানানো হয়, বিদায়ী ২০২০ সালে ভারতের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ। ফিলিপাইনের কমেছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার।
আলোচনায় আরও অংশ নেন কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, সৌদি আরবের ব্যবসায়ী তাজাম্মুল ইসলাম চৌধুরী, সৌদি আরব ফেরত ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম সুজন, মালয়েশিয়া ফেরত মো. জসিম, ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ নাঈম ও আলমগীর হোসেন।