পুঁজিবাজারে কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে কারসাজির দিন শেষ। যারা ছলচাতুরি করে শেয়ার লেনদেন করবে, তাদের সহজেই ধরা যাবে। আমাদের সার্ভেইল্যান্স (নজরদারি) এখন শক্তিশালী।’
তিনি আরও বলেন, ‘নজরদারির জন্য যে সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে, তা খুবই উন্নতমানের। কেউ খেলতে চাইলে সহজেই ধরে ফেলা সম্ভব। কাজেই কারসাজি করে পার পাবে না কেউই।’
শনিবার পুঁজিবাজার নিয়ে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সভায় এসব কথা বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।
একদল প্রাক্তন সচিবের গড়া প্লাটফর্ম ‘ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস’ (আইডিইএ)আয়োজিত আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উৎস হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম. আমিনুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান।
আলোচনায় অংশ নেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, ব্যবসায়ী আজম জে চৌধুরী প্রমুখ।
সেমিনারে প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘সরকার পুঁজিবাজারের বিষয়ে খুবই ইতিবাচক। এটাকে আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই। কিন্ত এর জন্য ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে।’
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘যারা পুঁজিবাজার সম্পর্কে জানে, তাদেরকে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে তারা জেনে বুঝে বিনিয়োগ করবে। এতে পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী হবে।’
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘১৯৯৬ সালে এবং ২০১০ সালে যে ধস হয়েছিল, সে সময় এখনকার মতো পুঁজিবাজার নিয়ে সবার জ্ঞান ছিল না। ১৯৯৬ সালে মানুষ হাতে কাগজ নিয়ে মতিঝিলে শেয়ার লেনদেন করত। কিন্তু এখন সেরকম নেই। এখন এগুলো সব চলে এসেছে সিসিবিএল, সিডিবিএল এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি প্লাটফর্মের মধ্যে। বিনিয়োগকারীরাও এখন সচেতন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কারসাজি থামানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রথম প্রথম আমরা বিষয়গুলো গণমাধ্যমে জানাতাম। তাতে দেখলাম একটু আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
‘আমরা এখন যেটা করছি, যারা সিরিয়াল ট্রেডিং করে বা চাতুরি করতে চায়, আমরা এখন তাদের ফোন করে কমিশনে ডেকে নিয়ে আসি। তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে এই কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখার জন্য যা যা দরকার তাই করছি।’
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) দশ গুণ শক্তিশালী করার উদ্যোগের কথা জানান শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আইসিবি শক্তিশালী করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যদি বাড়তি টাকা থাকে, তাহলে এর সঠিক ব্যবহার করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘এছাড়া আমরা হিসাব করে দেখেছি, মানুষকে দেওয়া হয়নি এরকম লভ্যাংশ এবং শেয়ার পড়ে আছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার। সেসব এতদিন বিভিন্ন জায়গায় পড়ে ছিল। আমরা সবগুলোকে এখন মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে আইসিবির কাছে নিয়ে এসেছি।
‘এই ফান্ড হবে পারপেচুয়াল। যে কেউ যখন তার সঠিক কাগজপত্র নিয়ে আসতে পারবেন, তিনি তার টাকা নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু যতদিন এই ফান্ড আইসিবির কাছে থাকবে, এটা আমাদের মার্কেটকে স্থিতিশীল করার জন্য কাজ করবে।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আইসিবি যেন এই তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য ‘ফাইনানসিয়াল টুলস’ও তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এছাড়া মার্জিন ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কম সুদে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি।’
এই ফান্ড পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।