চাঙ্গা পুঁজিবাজারে হঠাৎ ছন্দপতনের পর অস্বাভাবিক দাম বাড়া কোম্পানির বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসি।
৯১ পয়েন্ট সূচক হারানো, সিংহভাগ শেয়ারের মূল্যপতন, বিক্রয় চাপ, বিনিয়োগকারীরের আতঙ্কের পর চিঠি ইস্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টে গেছে সিদ্ধান্ত।
বুধবার বিকালে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত পাল্টানোর বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। (বুধবার) সন্ধ্যায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে আগের চিঠির বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। ফলে মঙ্গলবারের নিদের্শনা কার্যকারিতা বাতিল হলো।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত চিঠি মেইলে পাঠানো হয়েছে। আমরা রিসিভ করেছি। যেভাবে বলেছে, সেভাবেই কাজ করা হবে।’
এক দশক আগে মহাধসের পর সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়ানো পুঁজিবাজার নিয়ে যখন বিনিয়োগকারীরা আশায় বুক বাঁধছে, তখন মঙ্গলবার বিএসইসির সিদ্ধান্ত ছড়ায় উদ্বেগ।
স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ডিএসই ও সিএসইতে পাঠানো চিঠিতে গত ৩০ কার্যদিবসে যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৫০ শতাংশ বেড়েছে বা কমেছে সেসব কোম্পানির বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসির কার্যালয়
বলা হয়, যেসব কোম্পানির ইপিএস এক বছরের ব্যবধানে ৫০ শতাংশের বেশি তারতম্য হয়েছে সেগুলোও তদন্তের আওতায় থাকবে।
যেসব কোম্পানির বর্তমান লেনদেন আগের ছয় মাসের গড় লেনদেনের চেয়ে পাঁচ গুণের বেশি এবং মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের আগের ১০ কার্যদিবসে তুলনায় দাম ও লেনদেন ৩০ শতাংশের বেশি বা কম হয়েছে সেসব কোম্পানিকেও তদন্তের আওতায় আনতে বলা হয় আদেশে।
এই আদেশ দেয়ার পরের কার্যদিবসেই ছন্দপতন ঘটে পুঁজিবাজারে। ২৪৮ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের দিন ৯১ পয়েন্ট হারায় ডিএসইর প্রধান সূচক। একই ভাবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই কমে ২৪৯ দশমিক ০৬ পয়েন্ট।
সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে এত বড় দরপতন আর হয়নি।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, গত এক দশকে নানা ঘটনায় যখন ভালো কোম্পানির শেয়ারের দরও তলানিতে, তখন বাজার ঘুরে দাঁড়ালে ৫০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
আবার বেশি কিছু কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে, সেগুলোতে বিনিয়োগ করে বড় ধরনের লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছাড়তে চাইছেন না। বরং আরও কিছু শেয়ার কিনে দাম সমন্বয় করছেন। এ কারণে লেনদেন বাড়ছে, বাড়ছে দাম।
আগের দিনই দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স, পাঁচ হাজার ৮৬১ পয়েন্টে। এর আগে ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সূচক পৌঁছেছিল পাঁচ হাজার ৮১১ পয়েন্টে।
বিএসইসির সিদ্ধান্তে চাঙ্গা পুঁজিবাজারে ঘরে ছন্দপতন। এক দিনে ৯১ পয়েন্ট হারায় ডিএসইএক্স সূচক, ২৪৮ কোম্পানির শেয়ার দর হারায়
পুঁজিবাজারের এই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু গত মে মাসে শিবলী রুবাইত-উল ইসলামের নেতৃত্বে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে।
করোনাকালেও বিএসইসির বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। এর ফেলে দীর্ঘ দিনের আস্থাহীনতার বৃত্ত থেকে বাজার বের হয়ে আসছে বলে বিশ্লেষকরা নানা সময় বক্তব্য দিয়ে আসছেন।
এর মধ্যে মঙ্গলবারের সিদ্ধান্তের পর বাজারে নেতিবাচক প্রভাবেবর পর বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম অবশ্য বলেছিলেন, তাদের ওই চিঠি ছিল নিয়মিত কাজের অংশ ছিল। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন,
‘আমরা বলেছি, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়া যেগুলোর দাম বেড়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। তবে এটি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নয়, বরং নিয়মিত কাজ। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই।
‘আর বাজারে উত্থান-পতন নিয়মিত ঘটনা। আজ পড়েছে, আবার দেখবেন কাল উঠে যাবে। আসলে গত কয়েক বছরের অনিশ্চয়তার কারণে কিছু একটা করলেই বাজার পড়ে যায়। পরে আবার ঘুরেও যায়।’
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ অবশ্য বিএসইসির ওই চিঠির মধ্যে নেতিবাচক কিছু দেখেননি। নিউজবাংলাকে তিনি দেখেন, ‘বিএসইসি যে নির্দেশনা দিয়েছে তা বাজারবান্ধব। এ ধরনের নির্দেশনা না আসলে যে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়ছিল তা বাড়তেই থাকত। তখন যারা শেয়ার ধরে রেখেছিল তারা বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিত।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগকারীদের অভ্যাস হচ্ছে যখন কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকে তখন কেনা শুরু করে। তখন কারসাজিকারীরা বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা উত্তোলন করে নেন। এখন পুঁজিবাজারে মূল্য সংশোধন হোক বা বিএসইসির নির্দেশনার কারণে হোক- মূলত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুটা নিরাপদ হলো।’