বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সার্বভৌম ঋণ নিয়ে একটি উন্নয়ন তহবিল করার চিন্তা করছে সরকার। এতে অলস পড়ে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা দেশের উন্নয়নে অধিক কার্যকর হবে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সরকারের বর্তমান মেয়াদের দুই বছরপুর্তি ও আওয়ামী লীগ সরকারের ১২ বছর উপলক্ষ্যে নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া ভিডিও বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।
মোমেন বলেন, ‘আগে আমরা রিজার্ভ নিয়ে অনেক কথা শুনতাম। রিজার্ভ ২.৩ বিলিয়ন, ৩.২ বিলিয়ন ডলার। কয় মাসের ইনপুট ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন আমরা এটা নিয়ে কথা বলতেই রাজি নই। কারণ, এর দরকার নেই। আমাদের রিজার্ভ এখন ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
‘আমরা এখন এই রিজার্ভকে কীভাবে সার্বভৌম বন্ডে রূপান্তরিত করে আরও বেশি দেশের কাজে লাগাতে পারি, সে চিন্তা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে চলছি, তাতে আমাদের রিজার্ভ দ্রুতেই আরো বাড়বে। অনেক অনেক বাড়বে।’
সার্বভৌম বন্ড একটি বিশেষ ধরণের বন্ড যা সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে বিক্রি করে। সরকারের আয়ের চাইতে ব্যয় বেশি হয়ে গেলে অনেক দেশ সার্বভৌম বন্ড ইস্যু করে এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ব্যয়ের অর্থ যোগায়।
আবার রিজার্ভের অলস অর্থ দেশের উন্নয়নে বা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যবহৃত হয়। সরকারের ইস্যু করা অন্যান্য বন্ডের সঙ্গে সার্বভৌম বন্ডের পার্থক্যটি হলো সরকারি বন্ড কেনাবেচা হয় টাকায় এবং দেশের অভ্যন্তরে আর সার্বভৌম বন্ড কেনাবেচা হয় বৈদেশিক মুদ্রায় আন্তর্জাতিক বাজারে এবং এর ক্রেতা হতে পারে যে কেউ।
মোমেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও আন্তরিক। শেখ হাসিনা স্বদেশে একটি দুর্নীতিমুক্ত সন্ত্রাসমুক্ত জনবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব, নাগরিকবান্ধব সরকার গড়ে তলেছেন। ফলে গত কয়েক বছরে দেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।
‘২০০৮ সালে আমাদের ইলেক্ট্রিসিটির পরিমাণ ছিল ৩২০০ মেগাওয়াট। শেখ হাসিনা গত ১২ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে গেছে ২০ হাজার মেগাওয়াটে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।’
বর্তমান সরকারের এক যুগে শিক্ষা ব্যয় আট গুণ বেড়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘২০০৮ সাল নাগাদ প্রতি বছর দেশে এডুকেশন বাবদ খরচ হতো ১১ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের শিক্ষা বাজেটে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
‘এখন কিন্তু স্কুলের ছেলে মেয়েরা ডিজিটাল নলেজ পাচ্ছে। তাদের ভবিষ্যত যাতে ভালো হয়, শেখ হাসিনা কিন্তু সেজন্য নিয়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি। এই কোভিড-১৯ কালে কিন্তু মানুষ সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পাচ্ছে। তারা ঘরে বসে সব কাজকর্ম করছে। ছেলেমেয়েরা ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে লেখাপড়া করছে।’
দেশের বেশিরভাগ সড়কই চার লেনের হয়ে গেছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘রেলওয়ের অবস্থাও এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। এখন আমরা মেট্রো রেলের চিন্তাভাবনা করছি। এতে ঢাকার যানজট অনেক কমে যাবে।’
মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ দারিদ্র্যক্লিষ্ট দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। আমরা তা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। কোথায় ৪২ শতাংশ ছিল, আর কোথায় এখন ২০.০৫ শতাংশ!
‘অতিদারিদ্র্যের সংখ্যা ১০.০৫ ভাগ। আমরা যদি দারিদ্রকে জয় করতে পারি, তা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের জয় হবে।’
বাংলাদেশে পণ্ডিতদের পূর্বাভাসকে সব সময় মিথ্যা প্রমাণ করে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন মোমেন। বলেন, ‘পণ্ডিতেরা বলেছিলেন কোভিডের কারণে আমাদের জিডিপির গ্রোথ রেট ১.৩৮২৬ ভাগের বেশি হবে না। আমরা কোভিডের সময় ৫.২৪ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে পণ্ডিতদের ভুল প্রমাণ করেছি।’
আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে এক লাখ ১৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার জলসীমা পাওয়ার কথাও তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যুদ্ধ ছাড়া এটা অর্জন করা সরকারের বিরাট সাফল্য বলে মনে করেন তিনি।