দেশের চাষিদের সুরক্ষায় পেঁয়াজ আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
একই সঙ্গে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক হার বর্তমানের ৬২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে এ বিষয়ে পৃথক আদেশ দিয়েছে এনবিআর। নতুন শুল্ক হার কার্যকর হয়েছে।
পেঁয়াজের মৌসুমে আমদানির কারণে দেশের চাষিরা যেন ক্ষতির মুখে না পড়েন, সে দিক বিবেচনায় রেখে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এদিকে, বাজার নিয়ন্ত্রণে কমানো হলো আমদানি করা চালের শুল্ক হার।
এনবিআর বলেছে, এসব বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা এখন কার্যকর হলো। নতুন শুল্ক হারের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম সহনীয় হবে এবং স্থানীয় পেঁয়াজ চাষিরা তাদের ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
এর আগে ৩ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক আরোপ এবং বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে চালের শুল্ক কমোনোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরে দুটি মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ করা হয় এনবিআরকে। দুটি আদেশ জারি করে সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো।
গত বছরের মার্চে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজ সংকটে পড়ে দেশ। তখন অন্য দেশ থেকে আমদানি সহজ করতে পণ্যটির ওপর শুল্ক মওকুফ করে সরকার।
সম্প্রতি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। এমন এক সময় এ সিদ্ধান্ত নিল ভারত সরকার, যখন বাংলাদেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম।
এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় পেঁয়াজ এলে দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন স্থানীয় চাষিরা। বাংলাদেশ যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করে, তার সিংহভাগই স্থলপথে ভারত থেকে আসে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশি পেঁয়াজ চাষিদের ক্ষতি পোষাতে শুল্ক আরোপের দাবি উঠে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মহল থেকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক আরোপ করে পেঁয়াজ আমদানিকে নিরৎসাহিত করল সরকার।
গত রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনসী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভারত তার স্বার্থের কথা ভেবে কখনও কখনও খুলে দিচ্ছে, কখনও বন্ধ করে দিচ্ছে। এখন আবার তারা খুলে দিয়েছে। তবে আমরা আমাদের কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করব। তবে ভোক্তারাও যেন সংকটে না পড়েন, সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।’
চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হলো
আমনের ভরা মৌসুমে চালের বাজার চড়া। মিল মালিকদের অসহযোগিতার কারণে ঠিকমতো চাল কিনতে পারছে না সরকার। ফলে সরকারি গুদামে চালের মজুত কমে গেছে।
গত ৪ জানুয়ারি সরকারের গুদামে চালের মজুত ছিল ৫ দশমিক ৩২ লাখ টন। এই পরিস্থিতিতে, চালের মজুত ও সরবরাহ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বাজার নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২৫ ডিসেম্বর চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশিমক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এখন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে এনবিআর।
রাজস্ব বোর্ড বলেছে, আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চালের ওপর নতুন শুল্ক হার বলবৎ থাকবে।
সরবরাহ বাড়াতে ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির পাশাপাশি সীমিত আকারে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়।
রোববার খাদ্যমন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে শর্ত সাপেক্ষে বেসরকারি পর্যায়ে ১০ আমদানিকারককে চাল আমদানির অনুমতি দেয়।
একদিকে শুল্ক হার কমিয়ে অন্যদিকে আমাদানি বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সরকার। এসব পদক্ষেপের ফলে সরকার আশা করছে দাম সহনীয় হবে।