বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বদলে যাওয়া ব্যাংক খাতে দুষ্ট ক্ষত ঋণ কেলেঙ্কারি

  •    
  • ৭ জানুয়ারি, ২০২১ ১০:০৬

দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা গত এক যুগে ৯ কোটি থেকে বেড়ে ১১ কোটি হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, বুথ ব্যাংকিং এখন জনপ্রিয়।

প্রযুক্তির ব্যবহার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির ফলে গত এক যুগে ব্যাংক খাতের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। এখন আর পাঁচ-ছয় কিলোমিটার হেঁটে ব্যাংকের শাখায় যেতে হয় না। ব্যাংকের সেবাই গ্রাহকের দোরগোড়ায় চলে এসেছে।

তবে ব্যাংকিং বিষয়টি আর কোনো ভবনের কার্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। কার্যালয়ের বাইরেও চলছে ব্যাংকের লেনদেন। এর ফলে ব্যাংকে আমানতকারী ও আমানত বেড়েছে। পেমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়নের ফলে গড়ে উঠছে অনলাইননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য।

আওয়ামী লীগ সরকারের একটানা ১২ বছরের নেতৃত্বে ব্যাংক খাতের এই উন্নয়নের মধ্যেও কয়েকটি ঋণ অনিয়মের ঘটনা এ খাতের দুষ্ট ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে।

দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ১১ কোটি ২৭ লাখ। এসব হিসাবে জমা আছে ১৩ লাখ ১২ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। এ তথ্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের। অথচ ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকে আমানতকারীদের হিসাব ছিল ৯ কোটি ২১ লাখ। মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এক যুগের নেতৃত্বে দেশের ব্যাংক খাতের বিস্তৃতির এটি একটি উদাহরণ। এই সময়ে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৪৭টি থেকে বেড়ে ৬১টিতে দাঁড়িয়েছে। শাখার সংখ্যা ৬ হাজার ৮৮৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৭২৩টিতে।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় ব্যাংক সেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, বুথ ব্যাংকিং অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ কোটি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে লেনদেন হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মাসে লেনদেন হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

১২ বছর আগে প্রতি মাসে রেমিট্যান্স আসত গড়ে ১০০ কোটি ডলারেরও কম। এখন মাসে রেমিট্যান্স আসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৫৩৫ কোটি ডলার। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর রিজার্ভ ৪ হাজার ৩১৭ কোটি ডলার।

ব্যাংক খাতের এই বিপুল বিস্তৃতির পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্তর্ভূক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রযুক্তির আত্মীকরণের ভূমিকাকেই বড় করে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

১৯৭৭ সাল থেকে ব্যাংক খাতের সঙ্গে যুক্ত মোহাম্মদ নুরুল আমিন। এনসিসি ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

ব্যাংক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নুরুল আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, আশির দশকের শেষ দিকে দেশে দুই-একটি ব্যাংকে ছোটখাটো কাজের জন্য কম্পিউটারে ব্যবহার শুরু হয়। তখন বিদেশি ব্যাংকগুলো প্রযুক্তির ব্যবহারে কিছুটা এগিয়ে ছিল। নব্বইয়ের দশকে বেশ কিছু নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন ওই ব্যাংকগুলোতে অনেক কর্মকর্তা বিদেশি ব্যাংক থেকে এসে যোগ দেয়। তারাই মূলত বেসরকারি ব্যাংকের কাজে কম্পিউটারের ব্যবহারে আগ্রহ দেখায়। তবে তখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরোপুরি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অভ্যস্ত ছিল।

২০০০ সালের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্পের আওতায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে থাকে। এরপর অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেক এগিয়ে যায়। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো অনলাইননির্ভর ব্যাংকিংয়ে আসে মূলত ২০১০ সালের পর।

আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান ‘মানবিক ব্যাংক’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ডিজিটাইজেশনের ওপর অনেক বেশি জোর দেন। ওই সময়টাতেই ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট, অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজসহ বেশ কিছু প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা চালু হয়।

এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল পাচ্ছেন ব্যাংকের গ্রাহকরা। এখন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চেক নিকাশ হচ্ছে। সময় কম লাগছে। এক ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে আরেক ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলা যাচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে অনেক ধরনের লেনদেন করছেন গ্রাহকেরা। পেমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়নের হাত ধরেই দেশে ই-কমার্স বিকশিত হচ্ছে।

নারী উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করতে গত দশকে যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, এমনটা আর কখনও দেখা যায়নি। প্রতিটি ব্যাংকে নারী উদোক্তাদের জন্য আলাদা ডেস্ক, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিনা জামানতে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রণোদনার ঋণেও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনকে মাথায় রেখে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে আবারও কৃষিঋণের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই অর্থবছরে ১১ হাজার ১১৬ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকার। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে কৃষিঋণ বিতরণ।

যে কৃষকেরা লুঙ্গি পরে ব্যাংক শাখায় যেতে ভয় পেত, তাদের মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমানে এ ধরনের প্রায় ১ কোটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে কৃষকদের।

গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্যাংকিং সেবার পার্থক্য ঘুচিয়ে আনতে ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শহরে একটি শাখা খুললে গ্রামেও একটি শাখা খোলার নির্দেশনা দেয়। আগে এই অনুপাত ছিল ৪:১।

এ ছাড়া বর্গাচাষিদের ঋণ দেয়া, চার শতাংশ রেয়াতি সুদে মসলা চাষে ঋণ, প্রকাশ্যে কৃষিঋণ বিতরণসহ কৃষিবান্ধব অনেক নির্দেশনা এই এক যুগে এসেছে। ২০১০ সালে এসএমই ঋণ নীতিমালা এ খাতের ঋণপ্রাপ্তিতে বড় ধরনের অগ্রগতি আনে।

অংশগ্রহণমূলক মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন, বৈদেশিক লেনদেন সহজীকরণ, সবুজ অর্থায়ন, করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা, ইলেকট্রনিক কেওয়াইসির মাধ্যমে ঘরে বসে ব্যাংক হিসাব খোলা, গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে ডজনখানেক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চালু, সিআইবি অনলাইন চালু, স্কুল ব্যাংকিং চালুসহ অসংখ্য অন্তর্ভূক্তিমূলক নীতিমালা বাস্তবায়ন হয়েছে গত এক যুগে।

তবে গত এক যুগে সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিতে ঘটে যাওয়া অনিয়ম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব কর্মকাণ্ডকে অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে। এমনকি প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়াতে গিয়ে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা উদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর