চলতি অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারসহ, বিভিন্ন খাতে ঢালাওভাবে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত আয়) সাদা করার যে সুযোগ দিয়েছে সরকার, তাতে মোট ৭ হাজার ৪৪৫ জন সাড়া দিয়ে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা ঘোষণা দিয়েছেন।
নির্ধারিত হারে কর দিয়ে সুযোগটি নেয়ায় সরকার কর পেয়েছে প্রায় ৯৪০ কোটি টাকা।
সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে কালো টাকার মালিকদের কোনো তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এ কারণে কালো টাকার মালিকরা আড়ালেই থেকে গেলেন।
করোনাভাইরাসের অতিমারির বছরে রেকর্ডসংখ্যক করদাতা কালো টাকা সাদা করায় অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে বলে মন্তব্য করেছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
এ জন্য করদাতাদের অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ঘোষিত কালো টাকা (অপ্রদর্শিত আয়) দেশের অর্থনীতির মূল স্রোতে আসবে ।
ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এনবিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বিপুলসংখ্যক করদাতা কালো টাকা সাদা করেছিলেন।
ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি এই সুযোগ নিয়ে ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা কালো টাকা সাদা ঘোষণা করেছিলেন। এর বিপরীতে সরকার কর পেয়েছিল ৯১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
অব্যশ্য তখন অনেকেই ভয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন বলে এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করনে।
এনবিআর বলেছে, চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করা হয়।
এরা সবাই তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করে কালো টাকা ঘোষণা দেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর ছিল ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর রিটার্ন জমার শেষ সময়।
এবারের বাজেটে সরকার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগসহ নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, ফ্ল্যাট ও জমি ক্রয়ে কালো টাকা সাদা করার সযোগ দেয়।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ১০ শতাংশ কর দিয়ে এ সব খাতে যেকোনো অঙ্কের অপ্রদর্শিত অর্থ ঘোষণা করলে তার আয়ের উৎস সম্পর্কে এনবিআর, দুদকসহ অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কোনো প্রশ্ন করবে না।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাকালে বিনিয়োগ বাড়াতে এ সুযোগ অবারিত করা হলো। এ ছাড়া সুযোগটি নেয়া হলে দেশ থেকে টাকা পাচার কমবে এবং এই টাকা অর্থনীতির মূল স্রোতে আসবে।
রিটার্ন জমা ২৪ লাখ
কালো টাকার তথ্যের পাশাপাশি এ বছরের রিটার্ন দাখিলের তথ্য প্রকাশ করেছে এনবিআর।
চলতি করবর্ষে ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দেন। এটি গতবারের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে এনবিআর।
রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়ায় আয়কর আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কর আহরণ হয় ৩৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দেড় হাজার কোটি টাকা বেশি বলে জানিয়েছে এনবিআর। চলতি অর্থবছরে আয়কর খাতে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।