নতুন বছরের লেনদেন শুরুর দিনই আশা জাগিয়েছিল, দ্বিতীয় দিনই তা বাস্তবে রূপ নিল। বহুদিন পর ঢাকার শেয়ারবাজারে লেনদেন ছাড়াল দুই হাজার কোটি টাকা।
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ১৯৩ কোটি টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ২৬৮ কোটি টাকা বেশি।
২০১০ সালে দেশের পুঁজিবাজারে মহাধসের পর এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এ উচ্চতায় পৌঁছাল লেনদেন।
এর আগে গত ২৮ জুন একবার দুই হাজার ৫৪৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয় ডিএসইতে।
তবে ওইদিন জেএসকে বিডি লিমিটেডের শেয়ার ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ারের কাছে হাতবদলই ছিল এর বড় কারণ। এটা বাদ দিলে সেদিন সাধারণ লেনদেন এত ছিল না। ফলে তা নিয়ে আলোচনাও হয়নি।
ফলে এটা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন ধরাই যেতে পারে।
তিন বছর আগে ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি দুই হাজার ৬৪ কোটি টাকার লেনদেন হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে।
তার আগে সবশেষ এ পরিমাণ লেনদেন হয়েছিল ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর। মূলত তারপর থেকেই দীর্ঘস্থায়ী মন্দার কবলে পড়ে পুঁজিবাজার।
সেই থেকে ধুঁকতে থাকা বাজার গতি পেয়েছে নতুন করে। অনাস্থার কালো মেঘ কেটে গিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা, যার প্রভাব পড়ছে মূল্যসূচক ও লেনদেনে।
ডিএসই সাবেক পরিচালক শাকিল রিজভী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার ভালো হচ্ছে এটা অবশ্যই ভালো খবর। তবে এ খবরে সবারই পুঁজিবাজারে আসা উচিত হবে না, বরং আসার আগে বাজার সম্পর্কে ধারণা নেয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘বাজার সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে ভালো বাজারেও লোকসান গুণতে হতে পারে।’
টানা এক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজার নতুন বছরে নতুন আশা নিয়ে শুরু করেছে। রোববার সপ্তাহ ও ২০২১ সালের প্রথম কার্যদিবসে ২৫৩ কোম্পানি ও ফান্ডের দাম বৃদ্ধি, ২১৬ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধি দেখল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৯২৫ কোটি ৭৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
বছরের দ্বিতীয় কার্যদিবসে শুরুতে সূচক এক লাফে বেড়ে গেলেও এরপর কয়েক ঘণ্টা উঠানামার মধ্যে থাকে। দিন শেষে ইতিবাচক হিসেবেই শেষ হয় লেনদেন।
সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ১৯৩ কোটি টাকা
সূচকের উঠানামা থাকলেও লেনদেনের চিত্র শুরু থেকেই ছিল আশাব্যাঞ্জক।
অতি সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সিদ্ধান্ত নেয়, সেকেন্ডারি মার্কেটে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে আইপিও আবেদন করলেই আনুপাতিকহারে বন্টন হবে শেয়ার।
এটিও লেনদেন বাড়ার একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। শুধু আইপিওর জন্য ব্যবহৃত বিও হিসাবগুলো সচল করতে নতুন বিনিয়োগ করছেন বিনিয়োগকারীরা।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স আ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজারের যে ফান্ডামেন্টাল তাতে দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন স্বাভাবিক বিষয়। অনেকে বলেন পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে। কিন্তু আমি বলি পুঁজিবাজার কখনও স্থিতিশীল হয় না, বরং গতিশীল পুঁজিবাজার প্রয়োজন।’
বাজার পরিস্থিতি
সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৬৫২ পয়েন্টে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২০ মার্চ সূচকের সবোচ্চ অবস্থান ছিল পাঁচ হাজার ৬০০ পয়েন্টের ঘরে।
এদিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪৩ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪০৮ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে। লেনদনে হয়েছে ৮১ কোটি টাকার।
সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৯১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪৬টির। কমেছে ১০১টির আর অপরিবর্তীত ছিল ৪৪টির দর।
স্টক এক্সচেঞ্জটি লেনদেন হওয়া ৩৬২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৭টির, কমেছে ১৪২টির আর অপরিবর্তীত ছিল ৬৩টির দর।
ডিএসইতে লেনদেন শীর্ষ ২০ কোম্পানির যথারীতি প্রথম অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির এ দিন চার কোটি তিন লাখ ৬৮ হাজার ২৩৩টি শেয়ার ২৫৩ কোটি টাকায় লেনদেন হয়।
দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল একই গ্রুপের বেক্সিমকো ফার্মার। কোম্পানিটির এক কোটি চার লাখ ১৬ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০৫ কোটি টাকায়।
তবে লেনদেন চলাকালে বাংলাদেশকে করোনার টিকা দেবে না ভারত- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমতে থাকে।
কেননা বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমেই বাংলাদেশে সরকারের হাতে টিকা আসার কথা।