বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কালো টাকা সাদা: সাড়া মেলেনি এবারও

  •    
  • ৩ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:১৩

এনবিআর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জুলাই অর্থবছর শুরু হওয়ার পর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৬ হাজার ৯৩৭ জন কালো টাকা সাদা করেছেন। এ থেকে সরকার কর পেয়েছে ৮৮০ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দিয়েছে সরকার, তাতে সাড়া মেলেনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জুলাই অর্থবছর শুরু হওয়ার পর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৬ হাজার ৯৩৭ জন কালো টাকা সাদা করেছেন। এ থেকে সরকার কর পেয়েছে ৮৮০ কোটি টাকা।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন ১৮৮ জন। তাদের কাছ থেকে কর আদায় হয়েছে ২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

তারা সবাই আয়কর রিটার্ন দাখিল করে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত আয়) ঘোষণা দিয়েছেন। গত ৩১ ডিসেম্বর ছিল ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর রিটার্ন জমার শেষ সময়।

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছিল এনবিআর। ওই সময় ৩ হাজার ৩৫৮ জন এ সুযোগ গ্রহণ করে।

চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেটে সরকার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগসহ নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, ফ্ল্যাট ও জমি ক্রয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ঘোষণা করে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারের বাজেট বক্তব্যে বলেছিলেন, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে কর দিতে হবে। পাশাপাশি নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে এনবিআর বা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কোনো প্রশ্ন করবে না।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, একই সময় ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে, কেউই প্রশ্ন করবেন না।

৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কত জন সরকারের দেয়া এ সুযোগটি নিয়েছে তার হিসাব করেছে এনবিআর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হবে।

রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তরা বলেন, চলতি অথর্বছরে যেসব খাতে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয় এর বাইরে বিনিয়োগ চাঙা করতে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে সুযোগটি দিয়ে আসছে সরকার।

সেখানে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকৃত অর্থের ১০ শতাংশ কর দিলেই কোনো প্রশ্ন করবে না এনবিআর। ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই সুযোগ আছে।

এখন পর্যন্ত কেউ হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে কালো টাকা বিনিয়োগ করেননি বলে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে সরকার। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মোটামুটি সাড়া পাওয়া গেলেও এরপর থেকে কোনো বারই তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।

দেশে-দেশের বাইরে ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর ধরে টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ রাখে সরকার।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সরকার মনে করছে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলে দেশ থেকে টাকা পাচার কমবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০-২১ সালের বাজেটে নির্ধারিত হারে কর দিয়ে উন্মুক্তভাবে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আগেও ছিল। তবে আগের দেয়া সুযোগের সঙ্গে এবারের পাথর্ক্য হচ্ছে, আগে আয়ের উৎস নিয়ে এনবিআর প্রশ্ন করত না।

দুদক কিংবা অন্য কোনো গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল। কিন্তু এবার যে সুযোগ দেয়া হয়, তাতে কেউই প্রশ্ন করবে না। অর্থাৎ সুযোগটি অবারিত করা হয়েছে।

এবারের কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে সরকার বলেছে, করোনাকালে বিনিয়োগ বাড়াতে এ সুযোগ অবারিত করা হলো। এ ছাড়া সুযোগটি নেয়া হলে দেশ থেকে টাকা পাচার কমবে এবং এই টাকা অর্থনীতির মূল স্রোতে আসবে। বাস্তবতা হলো এতসব সুযোগ দেয়ার পরও তেমন সাড়া মিলছে না।

অর্থনীতিবিদেরা বারবার বলে আসছেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া ঠিক না। কারণ এতে করে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন। কিন্তু তাদের মত উপেক্ষা করে এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঢালাওভাবে সুযোগ দেয়ার পরও এই চিত্রটি আশাব্যঞ্জক নয়।

তিনি মনে করেন, কালো টাকার মালিকরা বিদেশে পাচার করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সরকারের উচিত হবে এ সুযোগ না দিয়ে বরং চাঁদাবাজি, ঘুষের মতো কালো টাকার উৎসগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া।

এ বিভাগের আরো খবর