ভূ-অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতি এখন একাকার হয়ে গেছে। বিশ্ব বাণিজ্য এখন শুধু একটা ব্যবসায়িক প্লাটফর্মেই সীমাবদ্ধ নেই। কূটনীতি ও রাজনীতিও ঢুকে গেছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত বড় জোট বা ব্লকে ভেড়া।
বুধবার ‘ভূ-অর্থনীতির উত্থান’ বিষয়ে এক ওয়েবিনারে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন।
তবে জোটে ভিড়তে গিয়ে বাংলাদেশ যাতে কারও দাবার ঘুঁটি না হয় বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন তারা। বলেন, কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়া মানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে সব দিয়ে দেয়া নয়।
রিসার্চ পলিসি ইনট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) এবং ফ্রাইডরিচ এবার্ট স্টুফ্টুং এর সহযোগিতায় অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন (ইআরএফ) এর আয়োজন করে।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিড চেয়ারম্যান ও পিআরআই-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পর্যায়ে বাংলাদেশ চাইলেই যার তার কাছে বাণিজ্য সুবিধা পাবে না। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য সুবিধা ধরে রাখা জরুরি। তবে ২০২৪ সারের পর সেই সুবিধা নিশ্চিত করতে শর্তসূচকের সব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অর্জনের বিকল্প নেই।’
ড. রাজ্জাক বলেন, ‘ইইউ-এর মতো বড় জোটের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও (এফটিএ) করা যেতে পারে। এর বাইরে অন্যান্য দেশের সঙ্গেও এফটিএ, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি-পিটিএ দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ী সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘পাশ্চাত্যের নয়, বাণিজ্য ও কূটনীতিতে সময় এখন এশিয়ার। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির ৫০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করবে এশিয়া। তাই আমাদের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এশিয়াকেন্দ্রীক হওয়া উচিত।’
এমসিসিআইএর সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, ‘আমরা আমাদেরকেই ভাল করে জানি না। কী করতে পারি, কী করা উচিত, কোথায় কোথায় কী ধরনের সুযোগ রয়েছে, সেখানে যেতে হলে সক্ষমতা কতটুকু বাড়াতে হবে আগে তা জানতে হবে। তার ঘাটতি রয়েছে বলেই অর্থনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্বে উদীয়মান হওয়া স্বত্ত্বেও সম্প্রতি গড়ে ওঠা চীনের নেতৃত্বে আরসিইপির প্লাটফর্মে ডাক পায়নি।’
এসব মন্তব্যের জবাবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য সুবিধা পেতেই সরকার পিটিএ বা এফটিএ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে শুল্ক আয় কমানোর সম্ভাবনা থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে আমরা সুফল পাব।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে দক্ষতার সঙ্গে বাণিজ্য পরিচালনার কোনো বিকল্প নেই।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাণিজ্যে দক্ষতা অর্জন করেছে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বব্যাপী এখন যেহেতু বাণিজ্য কুটনীতি চলছে, আমাদেরও এ সুবিধা নিতে হবে। এজন্য কূটনীতিকদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।’
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। প্যানেল আলোচকের বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এম হুমায়ুন কবীর, মেট্টোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির (এমসিসিআই) এর সভাপতি নিহাদ কবির, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এবং এফইএসএমএস এর আবাসিক প্রতিনিধি টিনা বোহোম।
ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভির সভাপতিত্বে ওয়েবিনারের সঞ্চালনা করেন সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম।