দেশে দারিদ্র্যের হার আগামী পাঁচ বছরে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ঠিক করেছে সরকার।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় পরিকল্পনাটি অনুমোদন দেয়া হয়।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সভায় যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রেস ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ২০২১-২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেছে। মঙ্গলবার এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
গড়ে ৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরে ২০২৫ সালের মধ্যে তা সাড়ে ৮ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয় পরিকল্পনায়।
বাংলাদেশকে ক্রমান্বয়ে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও মানসম্মত শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা ও কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯০০ কোটি ( ৬৪ হাজার ৯৫৯ বিলিয়ন) টাকা লাগবে। এর মধ্যে ১১ শতাংশ অর্থ আসবে বিদেশি ঋণ থেকে। বাকি ৮৯ শতাংশ অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে জোগান দেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয়। কেননা সিংহভাগ অর্থ আমরাই জোগান দেব। অথচ এক সময় এই চিত্র ছিল উল্টো। বেশিরভাগই বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হতো। ক্রমান্বয়ে পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে দেশ। এটি আমাদের জন্য বড় অর্জন।’
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও কোভিডের ফলে সৃষ্ট সাময়িক বেকারত্বসহ বিদেশফেরত কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শ্রমবাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতকরণ, আয়বৈষম্য হ্রাস, সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা, টেকসই নগরায়ণ, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিশেষ করে শিক্ষাকে ক্ষমতায়নের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সেজন্য শিক্ষাকে সবার জন্য উন্মুক্ত এবং কারিগরি শিক্ষার গুণগত মানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন কৌশল ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হচ্ছে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত চারটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রথমটি।
এ পরিকল্পনা দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ বাস্তবায়নের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কমিশন কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনায় ২০২৫ সাল নাগাদ কর-জিডিপির অনুপাত বর্তমানের ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশে উন্নীত করার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।