নতুন শিল্পনীতি তৈরি করছে সরকার। এ তথ্য জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতি, এসডিজি ২০৩০ ও রূপকল্প ২০৪১ বিবেচনা করে এবার ‘জাতীয় শিল্পনীতি -২০২১’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের (অংশীজন) সঙ্গে নিয়ে নতুন শিল্পনীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। শিগগিরিই তা চূড়ান্ত করা হবে।
সোমবার রাজধানীর দ্য প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার -২০১৮’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। শিল্প মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বর্তমানে জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ কার্যকর রয়েছে।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী ১৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মনোনীত প্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৮ তুলে দেন। শিল্প সচিব কে এম আলী আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
এবার বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ কোম্পানী লিমিটেড, ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস্ লি., এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লি. ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে তাফরিদ কটন মিলস্ লি., শেলটেক টেকনোলজি লিমিটেড, অকো-টেক্স লি. ও মেসার্স এনভয় ফ্যাশন লি. পুরস্কার পেয়েছে।
ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে কনসেপ্ট নীটিং লিমিটেড, এপিএস ডিজাইন ওয়ার্কস্ লি. ও সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লি.।
মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে ট্রিম টেক্স বাংলাদেশ, মাসকো ওভারসিস্ লিমিটেড ও ক্রিমসন রোসেলা সী ফুড লি. পুরস্কার লাভ করে।
কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায় ক্লাসিক্যাল হ্যান্ডমেইড প্রোডাক্টস্ বিডি, ইন্টেলিডেন্ট কার্ড লি. ও রূপকথা যুব ও মহিলা উন্নয়ন সংস্থা।
হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড ও মেটাটিউড এশিয়া লি. ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার -২০১৮’ লাভ করে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আরও জানান, হালকা প্রকৌশল শিল্পখাতের উন্নয়নে ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পিত ও সময়াবদ্ধ রোডম্যাপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি একটি বিশ্বমানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেটাবেজ এবং শিল্প বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেও সরকারের পদক্ষেপ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিন্ডিকেট ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা বন্ধে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান রাখেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করে দেশীয় পণ্যের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারিত করার জন্য পুরষ্কারজয়ীদের পরামর্শ দেন। তিনি ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও উৎপাদন এবং ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে নতুন প্রযুক্তির সন্নিবেশ করার জন্যও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ব্যাংকগুলোর গতানুগতিক মাইন্ডসেটের পরিবর্তন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে শিল্প সচিব কে এম আলী আজম বলেন, বঙ্গবন্ধুই সর্বপ্রথম ১৯৭৩ সালে শিল্প বিনিয়োগ নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে শিল্পখাতকে নীতি সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেন। রূপকল্প ২০৪১ অনুসারে শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সর্বাধিক। এ দায়িত্ব পালনে শিল্প মন্ত্রণালয় আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি লিমিটেডের হেড অফ লিগ্যাল অ্যান্ড এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের প্রধান মুবিনা আসাফ এবং ট্রিম টেক্স বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা বেগম সাহিদা পারভীন তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
মুবিনা আসাফ বলেন, সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করবে; যা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
বেগম সাহিদা পারভীন বলেন, সবাইকে নিয়ে কাজ করলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবেই।