হঠাৎ দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পর চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। কমানো হয়েছে শুল্ক হারও।
আমনের চাল বাজারে আসার পরও এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে চার থেকে পাঁচ দাম বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিল খাদ্য মন্ত্রণালয়।
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের প্রদক্ষেপ জানাতে রোববার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আসেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেই আমরা বেসরকারিভাবে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, এখন ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’
অবশ্য সরকার অবারিত আমদানির সুযোগ দেবে না। ব্যবসায়ীদের আবেদন করতে হবে তারা কী পরিমাণ চাল আনতে চান। তা পর্যালোচনা করে পরিমাণ বেধে দেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘২৫ শতাংশ ট্যাক্সে চাল আমদানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। তারা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবেন ১০ জানুয়ারির মধ্যে। মন্ত্রণালয় কাকে কতটুকু ছাড়পত্র দেবে, সেটার এলসি হবে। সেটা আমরা মনিটরিং করব। বেসরকারিভাবে এই চাল আমদানি করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’
খাদ্য সচিব নাজমুনারা খানম বলেন, ‘আমরা বেসরকারিভাবে ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানির যে অনুমতি দিয়েছি, সেটি অনেক রেস্ট্রিকটেড হবে, নীতিমালা করা হবে। এখানে কে কতটুকু আমদানি করতে পারবে সেটা নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু বেশি আমদানি করা যাবে না তাহলে কৃষক বঞ্চিত হবে।’
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে চালের দাম মানভেদে ৬.৬৭ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়েছে, যা কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা।
এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ, সরু চালের দাম বেড়েছে ১৯ থেকে ২৫ শতাংশ, যা টাকায় ১৫ থেকে ১৬ টাকা।
মন্ত্রী জানান, সরকারিভাবে চার লাখ মেট্রিক টন এবং জিটুজি পদ্ধতিতে দেড় লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হবে।
তবে বেসরকারিভাবে কী পরিমাণ চাল আমদানি করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেন নি খাদ্যমন্ত্রী। তার দাবি, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যতোটা আমদানি করা উচিত সেটা করা হবে।
তবে বোরো মৌসুম চলে এলে আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে। এরপর বোরোর ফলন দেখে আমদানির ক্ষেত্রে আবারও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এ বছর তিনবার বন্যার কবলে পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চল। এতে ব্যাপক ফসলাদির ক্ষতি হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ৩৭টি জেলায় এবারের বন্যায় ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আউশ আমন ধান উৎপাদনে।
দাম না বাড়ালে খুচরা বাজারে চাল না দেয়ার হুমকি দিচ্ছে মিলাররা। এসবের মধ্যে বেসরকারি খাতকে চাল আমদানির অনুমতি দিল সরকার।
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কারও হুমকিতে মাথা নত করে না। আমরা মিলারদের চুক্তির জন্য পীড়াপীড়ি করিনি। তারা তাদের হুমকি নিয়ে তারা থাকুক। প্রয়োজন আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান বেশি করে কিনব। যাতে করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দরকার হলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল কিনব।’
কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা ওপেন করেছি। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্য মণ প্রতি ১০৪০ টাকা, কিন্তু বাইরে কৃষকরা ধান বিক্রি করে বেনিফিট হলে সরকারের কাছে বিক্রি করে না। কারণ আজকেও বাইরে ১২০০ টাকা মণ দাম আছে।’
এটা সরকারের ক্রয় নীতির দুর্বলতা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের চালের রেট বাণিজ্য, কৃষি, অর্থ, খাদ্য মন্ত্রণালয় মিলে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সহনীয় রেট কি করা যায় সেটার নীতিমালা নেই। সব কিছুর একটা নীতিমালা আছে বাট এটার নাই। ধানের দাম কমলে আমরা কৃষকের জন্য হাহাকার করি। আবার চালের দাম বাড়লেও হাহাকার করি।’
এক্ষেত্রে একটা ‘স্ট্যান্ডার্ড রেট’ থাকা উচিত বলে মনে করেন মন্ত্রী।