দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে লোকবসতি শুরু প্রায় ১২৫ বছর আগে। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরের বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত দ্বীপে স্থায়ী বসবাস সাড়ে আট হাজার মানুষের।
দ্বীপ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এখানে খাবারের তালিকায় থাকে মাছের ছড়াছড়ি। কিন্তু শত চেষ্টায়ও মেলে না মাংসের দেখা। রুচি পাল্টাতেও মাছের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এ দ্বীপে রয়েছে শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ। রয়েছে কিছু রেস্তোরাঁও। সবগুলোই বাহারি সামুদ্রিক মাছে ঠাঁসা। এগুলোতেও মেলে না কোনো ধরনের মাংস।
সেন্টমার্টিনে মাংসের এমন আকালের প্রধান কারণ, এখানে বাণিজ্যিকভাবে গরু, ছাগল ও মহিষ উৎপাদন বা লালনপালন হয় না। তাই বাজারে পাওয়া যায় না মাংস। এতে মাংসের স্বাদ থেকে পর্যটকদের পাশাপাশি বঞ্চিত হচ্ছেন দ্বীপবাসীও।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তথ্যমতে, পুরো দ্বীপে রয়েছে মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ গরু ও ৬০টি মহিষ। ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা হাজারখানেক। এ ছাড়া অল্প কিছু পরিবার হাঁস-মুরগি পালন করে।
সংখ্যায় খুবই কম হওয়ায় পরিবারগুলোতে নিজেদের খাওয়ার জন্যও এগুলো খুব একটা ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ সামাজিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেই কেবল একটা-দুটো পশু জবাই করে মাংসের প্রয়োজন মেটানো হয়।
আট বর্গ কিলোমিটার আয়তনের (৮৬২ একর ৬৩ শতাংশ) সেন্টমার্টিন দ্বীপের গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩.৬ মিটার। বছরজুড়ে প্রতিদিন এখানে চলে জোয়ার-ভাটার খেলা। কৃষিপণ্যের উৎপাদনও খুব একটা হয় না। বেশিরভাগ অধিবাসীই সাগরে মাছ ধরাকে বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে।
বাকিদেরও কৃষিতে খুব একটা আগ্রহ নেই। এরপরও প্রয়োজন মেটাতে কিছু মানুষ আলু, টমেটো, মুলা, গাজর, বেগুন ও তরমুজ উৎপাদন করেন। কিন্তু পর্যটকদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের উৎপাদিত এই ফসল চার মাসের বেশি চাহিদা মেটাতে পারে না।
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে প্রায় সব কিছুই তাদের টেকনাফ থেকে কিনে আনতে হয়। ইঞ্জিনচালিত বিশেষ নৌকায় এই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। ঝুঁকিপূর্ণ; খরচও খুব বেশি।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতকারী বাণিজ্যিক পাঁচটি জাহাজও এসব পণ্য তোলে না। সব মিলিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনাই যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে মাংসের মতো দামি ও পচনশীল খাবার বহনে আগ্রহী হয় না সাধারণ মানুষ।
সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, এখানে মাংস খাওয়া হয় না বললেই চলে; কারণ উৎপাদন ও সরবরাহ দুটোই কম। বাণিজ্যিকভাবে কয়েকটি দোকানে ব্রয়লার পাওয়া যায়। সেটিও একবার শেষ হলে ফের আনতে সপ্তাহ পেরিয়ে যায়।
পুষ্টির ঘাটতি কীভাবে পূরণ হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, দ্বীপবাসী এ পরিবেশে অভ্যস্ত। তাদের তেমন সমস্যা হয় না। সামুদ্রিক তাজা মাছে প্রোটিনও বেশি। তা দিয়েই ঘাটতি পূরণ হয়। সমস্যা কিছুটা হয় পর্যটকদের।