বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঈগল রেল প্রকল্প থেকে সরে আসছে চট্টগ্রাম বন্দর

  •    
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৮:১৬

উচ্চভিলাষী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর আমেরিকান কোম্পানি ঈগল রেল কন্টেইনার লজিস্টিকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর বন্ধ হয়ে গেছে সব তোড়জোড়।

ইয়ার্ড থেকে ইয়ার্ডে উড়ালপথে কন্টেইনার পরিবহনের জন্য ঈগল রেল নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)।

এই প্রকল্পের জন্য ২০১৯ সালের শেষের দিকে আমেরিকান একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। চলতি বছরের শুরুতে সমীক্ষার প্রতিবেদন পায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ এতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় অনানুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের কার্যক্রম।

বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ টিইইউএস কনটেইনার মুভমেন্ট করা যায়। ঈগল রেলে ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩০০ টিইইউএস কনটেইনার মুভমেন্ট করা যাবে বলে আশা করেছিল চবক।

অনেকটা কেবল কারের মতো ঈগল রেল অন্তত ৫০ ফুট ওপরে স্টিল স্ট্রাকচারের ট্র্যাকের মাধ্যমে কন্টেইনার স্থানান্তর করে থাকে। প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) থেকে ফ্লো-ইয়ার্ড এবং চিটাগং কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) থেকে অফ-ডক এছাক ব্রাদার্স ডিপো পর্যন্ত ঈগল রেলপথ বানানোর পরিকল্পনা ছিল বন্দরের। প্রকল্প সফল হলে তা বে-টার্মিনাল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ার কথা ছিল।

উচ্চভিলাষী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর আমেরিকান কোম্পানি ঈগল রেল কন্টেইনার লজিস্টিকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর বন্ধ হয়ে গেছে সব তোড়জোড়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) মো. জাফর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে বন্দর অভ্যন্তরে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, কন্টেইনার মুভারসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি প্রবেশ করছে। এতে বিমানবন্দর সড়কসহ নগরীর বিস্তৃত এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। জাহাজের হুক পয়েন্ট থেকে ডেলিভারি পয়েন্টে বা রিসিভিং পয়েন্ট থেকে জাহাজের হুক পয়েন্টে ঈগল রেলের সাহায্যে কন্টেইনার আনা নেয়ার ব্যবস্থা করা গেলে বন্দর অভ্যন্তরে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে হতো না।’

পরিকল্পনা থমকে যাওয়ার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈগল রেল তৈরির সক্ষমতা যাচাইয়ে একটি সমীক্ষা হয়েছে। আমরা রিপোর্ট পেয়েছি। তবে এই প্রকল্পটি নিতে হলে আরও অনেক সময় এবং স্টাডি দরকার। বন্দরের হাতে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প রয়েছে। তাই আপাতত ঈগল রেল তৈরির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।’

সক্ষমতা যাচাই প্রতিবেদনে কী ছিল- সে বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি জাফর আলম।

চট্টগ্রাম বন্দরে ২০১৪ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং হয় ১৭ লাখ টিইইউএস, ২০১৫ সালে ২০ লাখ, ২০১৬ সালে ২৩ লাখ এবং ২০১৭ সালে তা ২৬ লাখে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে ২৯ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯৬ কন্টেইনার, ২০১৯ সালে ৩০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং হয়। এ বছর করোনা মহামারির মধ্যে ২৮ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং হয়েছে। বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ বার্ষিক ১২ থেকে ১৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বন্দরের কন্টেইনার রাখার মোট ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার। করোনার সময়ে এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত ৪১ হাজার কন্টেইনার জমে গিয়েছিল বন্দরে।

বন্দর ব্যবহাকারীরা বলছেন, দুর্যোগসহ বিভিন্ন সংকটে ঠিকমতো ডেলিভারি না হলে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট লেগে যায়। বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনাল টার্মিনাল নির্মাণসহ একাধিক প্রকল্পের কাজ চলছে বন্দরে। বে টার্মিনাল প্রকল্পের তেমন অগ্রগতি নেই, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের কাজ বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে, অথচ জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড সম্প্রসারণ দরকার।

বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ঈগল রেলের চেয়েও বে টার্মিনাল নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতিবছর বন্দরে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল দিন দিন বাড়ছে। তাই নতুন বন্দর নির্মাণ করা আগে প্রয়োজন।’

সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি জেটি ব্যবহার করে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের বহির্নোঙর থেকে জেটিতে ভিড়তে প্রতিদিন গড়ে অপেক্ষায় থাকে ২০ থেকে ৩০টি জাহাজ। এর মধ্যে প্রতিদিন জেটিতে খালাস হয় আট থেকে ১০টি জাহাজ।

বিশ্বের ৬০টি সমুদ্রবন্দর আছে, যেগুলোয় বছরে ৩০ লাখ বা তিন মিলিয়ন একক কনটেইনার ওঠানামা করে। সেই ‘থ্রি মিলিয়নেয়ার পোর্ট’ এর তালিকায় ২০১৯ সালে যোগ হয়েছিল দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের নাম। তবে করোনার কারণে এবার সেই তালিকায় থাকছে না চট্টগ্রাম বন্দর।

এ বিভাগের আরো খবর