চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জটের কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপ রুটে কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা কসকো শিপিং লাইনসের চারটি জাহাজ। যদিও বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরে আসলে এমন কোনো জটই নেই।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর থেকে ইউরোপে জাহাজ পাঠায় নয়টির মতো লাইন। এর মধ্যে একটি লাইন বন্ধ হলেও পণ্য সরবরাহ থেমে নেই। তবে একটি লাইন বন্ধ থাকলে পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হবে, এটা নিশ্চিত।
গত ২১ ডিসেম্বর কসকো বিজ্ঞপ্তি দিলেও বাংলাদেশে তা জানাজানি হয় বুধবার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজ জটের কারণে কন্টেইনারবাহী জাহাজ জেটিতে দেরিতে ভিড়ছে এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে এড়িয়ে যেতে হচ্ছে। এ জন্য এই রুটে সার্ভিস বন্ধ করা হয়েছে।
তবে যে কারণ দেখিয়ে কসকো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশি এজেন্ট কন্টিনেন্টাল শিপিং ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান ইকবাল চৌধুরী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট নেই। এখন বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল পাঁচ থেকে ছয় দিন। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটেছে।’
তাহলে এর সমাধান কী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা কসকো শিপিং লাইনসের সদর দপ্তর ও ইউরোপ শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিমও বলেন, ‘বন্দরে কোনো ধরনের জাহাজ জট নেই। কেউ এই ধরনের কথা বললে সেটি ভুল তথ্য।
তিনি বলেন, ‘গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জেটিতে জাহাজ বার্থিং সময় এক দিনের কম। এছাড়া চার মাস ধরে বহির্নোঙরে পৌঁছেই কন্টেইনার জাহাজগুলো জেটি অন এরাইভাল বার্থিং নিচ্ছে। তাই জাহাজজটের সংবাদটি ভুল।’
কসকো শিপিং লাইনস চীনের সাংহাইভিত্তিক শিপিং সংস্থা। এটি বিশ্বব্যাপী পণ্যবাহী জাহাজ পরিবহন সেবা দিয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে কসকো শিপিং লাইনসের চারটি জাহাজ চলাচল করে। এই রুটে প্রতিমাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কনটেইনার আনা নেয়া করে জাহাজগুলো।
সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি জেটি ব্যবহার করে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়।
স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের বহির্নোঙর থেকে জেটিতে ভিড়তে প্রতিদিন গড়ে অপেক্ষায় থাকে ২০ থেকে ৩০টি জাহাজ। এর মধ্যে প্রতিদিন জেটিতে খালাস হয় আট থেকে ১০টি জাহাজ।
বিশ্বের ৬০টি সমুদ্রবন্দর আছে, যেগুলোয় বছরে ৩০ লাখ বা তিন মিলিয়ন একক কনটেইনার ওঠানামা করে। সেই ‘থ্রি মিলিয়নেয়ার পোর্ট এর তালিকায় ২০১৯ সালে যোগ হয়েছিল দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের নাম। কিন্তু করোনাকালে আমদানি রপ্তানি কমে যাওয়ায় এই তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় বন্দরটির নাম।