বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারতীয় পণ্য ওঠানামায় কতটা সক্ষম চট্টগ্রাম বন্দর

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৯:৫১

চট্টগ্রাম বন্দরের এখন যে অবস্থা, তাতে নিজের দেশের ব্যবসায়ীদেরই সেবা দিতে পারছে না। এর মধ্যে ভারত যদি পণ্য আনা-নেয়া শুরু করে তাহলে বন্দর সচল থাকবে কি না, সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

পণ্যবাহী চারটি কনটেইনার দিয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার শুরু করেছে ভারত। তবে প্রতিবেশী দেশের পণ্য পরিবহনে বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯৮ ভাগ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এ জন্য এমনিতেই সবসময় চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট লেগে থাকে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের বহির্নোঙর থেকে জেটিতে ভিড়তে প্রতিদিন গড়ে অপেক্ষায় থাকে ২০ থেকে ৩০টি জাহাজ। তার মধ্যে প্রতিদিন জেটিতে খালাস হয় আট থেকে ১০টি জাহাজ। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি জাহাজের গড় অবস্থানকাল ছিল চার দিন। ২০২০ সালে তা প্রায় ছয় দিনে পৌঁছেছে। আমদানি-রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত অবস্থানকাল বাড়ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে পণ্য খালাসের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে, তার বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০১৩ সালে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার কথা থাকলেও এগুলো দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে।

বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায়ই জাহাজজট লেগে থাকে। একটি জাহাজ থেকে পণ্য নামাতে অন্তত ছয় দিন সময় লাগে। চট্টগ্রাম বন্দরের এখন যে অবস্থা, তাতে নিজের দেশের ব্যবসায়ীদেরই সেবা দিতে পারছে না। এর মধ্যে ভারত যদি পণ্য আনা-নেয়া শুরু করে, তাহলে বন্দর সচল থাকবে কি না, সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, সক্ষমতা থাকলে ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দিতে ব্যবসায়ীদের কোনো আপত্তি নেই। তাতে সরকার তথা ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবে।

ভারত বন্দর ব্যবহার শুরু করায় জাহাজ জট বাড়লে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তৈরি পোশাক খাত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পোশাক খাতের এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, চীন, শ্রীলঙ্কা, ভারত, কম্বোডিয়া। প্রতিযোগী দেশগুলোর বন্দরে জাহাজ জটের সমস্যা নেই। বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট বাড়লে কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানিতে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় দেশীয় উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়বেন।

তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ভারতকে বন্দর ব্যবহার করতে দিতে প্রস্তুত। ভারত যে পরিমাণ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করবে, সেই সক্ষমতা চট্টগ্রাম বন্দরের রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ২০১৯ সালে ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে। ২০২০ সালে আমাদের টার্গেট ছিল ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং। কিন্তু করোনার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।

‘প্রতি বছর বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে; জেটি বাড়ছে। ২০২১ সালে নতুন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হবে। তাই ভারতীয় কনটেইনার পরিবহনে তেমন সমস্যা হবে না।’

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের সঙ্গে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার অনেক বেশি সাশ্রয়ী। কারণ ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৬৮০ কিলোমিটার। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ২৪৮ কিলোমিটার।

একইভাবে মিজোরামের রাজধানী আইজলের সঙ্গে কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার। কিন্তু সড়কপথে চট্টগ্রামের দূরত্ব মাত্র ৬৫৫ কিলোমিটার; নদীপথে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার।

অসমের রাজধানী গৌহাটি, মনিপুরের রাজধানী ইমফল, মেঘালয়ের রাজধানী শিলং এবং নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমার ক্ষেত্রেও একই কথা।

ভারতের এসব রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য এখনও কলকাতা বন্দরকেন্দ্রিক। অথচ কাছেই রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। ফলে এ বন্দরের মাধ্যমে এসব রাজ্যের ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি-রপ্তানি করলে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই লাভবান হবে।

এ জন্য ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে চুক্তি হয়। এক বছর পর ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এ সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতির মান বা এসওপি সই হয়।

সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি জেটি ব্যবহার করে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়।

বছরে ৩০ লাখ বা ৩ মিলিয়ন কনটেইনার ওঠানামা করে বিশ্বে এমন সমুদ্রবন্দর আছে ৬০টি। সেই ‘থ্রি মিলিওনেয়ার পোর্ট’-এর তালিকায় ২০১৯ সালে যোগ হয় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের নাম।

এ বিভাগের আরো খবর