করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেলেও বাংলাদেশের অবস্থা ভালো আছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ দাবি করেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচকে অগ্রগতির পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।
ছয় বছর অগ্রগতি ধরে রাখতে পারলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ হবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে।
করোনার মধ্যেও বেড়ে চলছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ৪৯ তম বিজয় দিবসের আগের দিন সবশেষ রিজার্ভের অঙ্ক দাঁড়ায় রেকর্ড চার হাজার ২০০ কোটি (৪২ বিলিয়ন) ডলার।
এর মধ্যে আসে আরও একটি সুখবর। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ, বর্তমান অবস্থান ১৩৩ তম।
করোনাকালেও এ উন্নতিকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। বলেন, ‘কোভিড-১৯ মতো বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে আমরা অতিবাহিত হচ্ছি। এমন বিপর্যয়ের মধ্যেও আমরা মানব উন্নয়নে এগিয়েছি।
‘এই রিপোর্টটি আমাদের মতো যারা বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী তারা খুবই গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে থাকেন। সার্বিকভাবে আমরা ভালো করেছি। যতটা প্রত্যাশা ছিল ততটা না হলেও মোটা দাগে আমরা ভালো করেছি। বিশেষ করে ২০২০ সাল ছিল সারা বিশ্বের জন্য একটি বড় বিপর্যয়। এই বিপর্যয়ের মধ্যেও আমরা এগিয়েছি তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।’
দেশের অগ্রগতিতে অনেকে মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেও মনে করেন এম এ মান্নান। এসবে নজর না দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজটা আমাদের করতে হবে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমাদের একটি পথরেখা পেয়েছি, যে আমরা কীভাবে কাজ করব।
‘আমরা অনেক জায়গায় ভালো করেছি, সেখানে কীভাবে আরও ভালো করা যায় তার জন্য নীতি সহায়তা বাড়াতে হবে। আমরা সেটা করব। বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় সবসময় গুরুত্ব দিয়েছে ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।’
ইউএনডিপির সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মানব উন্নয়ন সূচকে আটটি দক্ষিণ এশীয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। তবে পরিবেশের প্রভাবজনিত সমন্বিত মানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী আরও ৯ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।
ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদিপ্ত মুখার্জি বলেন, ‘বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ছোট দেশ এগিয়ে আছে, কারণ তাদের চ্যালেঞ্জ কম। বাংলাদেশের তুলনায় তাদের জনসংখ্যা কম।
করোনা মহামারি বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও মনে করেন সুদিপ্ত মুখার্জি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারিতে এখনও পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। বহু পরিবার জীবিকা হারিয়ে দারিদ্র সীমানার নিচে নেমে গেছে। আয় অসমতা বেড়েছে এবং লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে।’