শীত বাড়তে থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি শুরু হয়েছে গা গরম রাখার কাপড়। রাজধানীতে নিউ মার্কেটের মতো বিপণি বিতানগুলোতে যাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে করোনাভাইরাস মহামারিতে এসব মার্কেটে এবার অন্যান্য বছরের মতো বিক্রি নেই বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানী নিউ মার্কেটের তিন তলা সুপার মার্কেটে ছয়-সাতটি দোকানে সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের জ্যাকেট বিক্রি হয়। তাদের প্রধান ক্রেতা বিদেশে যাওয়া লোকজন। শীতে এসব দোকানে ভিড় করেন অনেকেই।
মো. তাহের নামের সেখানকার এক দোকানি নিউজবাংলাকে জানান, শীতের কাপড় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক কম বিক্রি হচ্ছে। করোনায় আর্থিক সমস্যার কারণে মানুষ শীতের কাপড় কম কিনছে।
গত মার্চে করোনার শুরু থেকেই ব্যবসার খুব খারাপ অবস্থা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্লাইট বন্ধ থাকলে আমাদের ব্যবসা খারাপ হয়। আমার নিজের দুইটা দোকান ছিল। কিন্তু লোকসানের কারণে একটা ভাড়া দিয়ে দিছি। এমনও দিন গেছে একটাও কাপড় বিক্রি হয় নাই।’
এসব কাপড় কোথা থেকে আনেন, এমন প্রশ্নে মো. তাহের বলেন, ‘এখানে সাধারণত গার্মেন্টসের জ্যাকেট পাবেন, যা রপ্তানি হয়। গার্মেন্টস থেকে যারা এই কাপড় বের করে আনেন, তাদের থেকেই আমরা কিনে আনি।’
পাশের দোকানদার মো. নাইম জানান, গত বছর এ সময় দিনে এক থেকে দেড় লাখ টাকার পোশাক বিক্রি করলেও এখন ৫০ হাজার টাকার পোশাক বিক্রি করতেই কষ্ট হয়।
তিন তলা এই মার্কেটের সব দোকানেই রোববার শুধু শীতের পোশাকই চোখে পড়ে। সেসব দোকানে আগে শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জিই বেশি দেখা যেত।
দোকানিরা বলছেন, শীতের দুই থেকে তিন মাস তারা এই শীতের পোশাকের ব্যবসাই করবেন।
সেখানকার এক দোকানদার বারেক হোসেনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
তিনি বলেন, ‘এখন প্রতিদিন পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকার মাল বিক্রি করি। অন্যান্য বছর এই সময়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মাল বিক্রি হতো। সাধারণত ছাত্ররা আমাদের কাছ থেকে বেশি কাপড় কিনে।
‘এই বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক বড় লোকসান হয়ে গেছে। তা ছাড়া মানুষের অবস্থাও তো ভালো না। টাকা না থাকলে কিনবে কীভাবে?’
রং-বেরঙের টুপি, মাফলার, হাতমোজাসহ নানা ধরনের হোসিয়ারি পণ্য নিয়ে নিউ মার্কেট এলাকার ফুটপাতে বসেছেন বাবুল হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘করোনার লাইগ্যা ব্যবসা ডাউন। এইবার টাউনে ওইরোম শীতও নাই। তাই ব্যাচা-বিক্রি কম। করোনার লাইগ্যা মানুষের ইনকাম কম। তাই না কিন্না পারলে অহন মানুষ কিনে না।
‘আগে যে দুইটা কিনত, অহন সে একটা কিইন্না কোনো রহমে দিন কাটায়। গত বছর এক দিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার বেচছি। এইবার আট থেকে ১০ হাজার বেচছি।’
‘দেইখা লন ১০০, বাইছা লন ১০০’
‘এ দেইখা লন ১০০, বাইছা লন ১০০, চইলা গেল ১০০, শ্যাষ হইল ১০০।’
এভাবে সুরে সুরে নিউ মার্কেটের এক ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পাতলা চাদরসহ শীতের কিছু পোশাক বিক্রি করছিলেন সিরাজ মিয়া।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার এইহানের সব মাল ১০০ কইরা। তয় ব্যবসা খারাপ। দ্যাশে ঠান্ডা নাই, ব্যবসা নাই। গত বছরের আন্দাজে এই বছর ওইরোম বেচাকিনা নাই। বঙ্গবাজার, সদরঘাট থেইকা মাল কিনি।’
গুলিস্তানের ফুটপাতে হুডি বিক্রি করেন আবুল কাশেম। ব্যবসা খারাপ বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘মাইনষের কাছে ট্যাহা না থাকলে কিনব কি দিয়া? চাকরি চইলা যাইতাছে। এর লাইগা যা আছে তাই দিয়াই চালাইতাছে শীত।
‘গত বছর প্রতিদিন আট থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। এইবার চার থেকে পাঁচ হাজার বেচি। নগর মার্কেট, ট্রেড সেন্টার, নারায়ণগঞ্জ থেইকা মাল আনি।’
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশে ফুটপাতের দোকানিরা কম্বল বিক্রিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রতি বছরই শীতের মৌসুমে এখানকার কম্বলের দোকান বেশ জাঁকজমক। তবে এ বছর বিক্রি কম বলে দাবি করছেন এখানকার দোকানিরা।
সাত বছর ধরে এখানে দোকানদারি করছেন জুয়েল মিয়া। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর শীতের ব্যবসা খুবই খারাপ। গত বছর ব্যবসা বালা আছিল। এই বছর ঠান্ডা নাই। তা ছাড়া করোনার কারণে অনেকেই মাল ইম্পোর্ট করতে পারে নাই বইলা মালের কোয়ালিটি কম।
‘বেচাকেনা কম। করোনার কারণে মানুষ এই বছর মাল কম কিনছে। দুই হাজার থেইকা সর্বোচ্চ সাত হাজার পর্যন্ত বিক্রি হয় এই মাল।’