কিছু লাভ হলেও বাংলাদেশ আর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতারে থাকতে চায় না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। জানিয়েছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হলে এলডিসি হিসেবে যেসব সুযোগ সুবিধা পেত, তা বাদ হলেও নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হবে। উত্তরণের কারণে অন্যান্য যে সুবিধা হবে, তাতে বাড়বে কর্মসংস্থান।
রোববার ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি’ বিষয়ে এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।
মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈকিত ভঙ্গুরতার সূচকে অগ্রগতির পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।
ছয় বছর অগ্রগতি ধরে রাখতে পারলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ হবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে।
এলডিসি দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কিছু শুল্ক সুবিধা, কম সুদে ঋণ, মেধাস্বত্বের ক্ষেত্রে ছাড়সহ নানা সুবিধা পাওয়া যায়। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে এই সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন এলডিসি থেকেছি। আর থাকতে চাই না। আরও বেশি দিন থাকতে পারলে হয়তো লাভ আছে, কিন্তু বেশি লাভও ভালো না।’
বাংলাদেশ উন্নয়নের একটি ধাপ পূরণ করে আসায় চাইলেও এলডিসি হয়ে থাকা সম্ভব না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উত্তরণে যেতেই হবে। তাই সময় এসেছে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার।’
অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), র্যাপিড এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ ওয়েবিনার আয়োজন করে। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিড চেয়ারম্যান ও পিআরআই-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক এমএ রাজ্জাক। সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও র্যাপিড নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ। ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মূলপ্রবন্ধে ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর যদি ট্রানজিশন পিরিয়ড না বাড়ানো হয়, তাহলে ৭৫ ভাগ রপ্তানি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা হারাবে দেশ। তবে ট্রানজিশন পিরিয়ড বাড়ানো গেলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা অনেক সহজ হবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণে বৈদেশিক সাহায্যও কমবে বলে মনে করেন এম এ রাজ্জাক। তবে আগে থেকেই বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা কমে যাওয়ায়, এটা দেশের জন্য খুব একটা ক্ষতির কারণ হবে না।
এসব বক্তব্যের জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ আসবে। সেটি অমূলক নয়। কিন্তু সঙ্গে আসবে হাজার সম্ভাবনাও। তাই দরকার মানসিক বিভ্রান্তি দূর করা।’
তিনি বলেন, উত্তরণের পর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির প্রসার ঘটবে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি হবে। এজন্য কিছুটা ঝুঁকি তো নিতেই হবে।’
ট্রানজিশন পিরিয়ড বাড়াতে বাণিজ্য সচিবকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার পরামর্শও পরিকল্পনা মন্ত্রী।
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘উত্তরণে চ্যালেঞ্জ আছে ঠিক, তাই বলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। মধ্য আয়ের দেশ হলে এফডিআই বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে কর্মসংস্থানও। তবে প্রস্তুতিরও প্রয়োজন রয়েছে। ‘
তিনি বলেন, ‘করোনার ক্ষতি তুলনামূলক কম হলেও যেটুকু হয়েছে, তা মোকাবিলায়ও উদ্যোগ থাকতে হবে। জিডিপির তুলনায় কর আদায় খুবই কম। এটা বাড়ানোর জন্য আরও বেশি আলোচনা হওয়া উচিত।’
জাফর উদ্দিন বলেন, ‘ইতিমধ্যে ইইউসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আমরা শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধার ট্রানজশেন পিরিয়ডটা বাড়িয়ে নিতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০২৩ পরবর্তী জিএসপি পলিসিতে ইভিএসহ বৈদেশিক বাণিজ্যের অনুকূলে অন্যান্য বিধান অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে কার্যকর যোগাযোগ ও সমঝোতা চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।