বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রপ্তানি খাত নিয়ে ভয়ের কারণ নেই: শামস মাহমুদ

  •    
  • ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৩:০৯

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সম্ভাবনা আছে। এর কারণ, প্রতিযোগী অনেক দেশ যেমন তুরস্ক, পাকিস্তান, মালয়েশিয়ার তুলনায় বাংলাদেশে পণ্যের উৎপাদন খরচ অপেক্ষাকৃত কম। করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের পরেও কম দামে মানসম্মত পণ্য বাংলাদেশই সরবরাহ করতে সক্ষম। এ কারণে ওই সব দেশের রপ্তানি আদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হবে।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল বলে মনে করছেন ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ। তবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ভোগ ব্যয় লক্ষ্যণীয়ভাবে কমেছে, এটি বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ বলে অভিমত তার।

ডিসিসিআই সভাপতি বলছেন, দেশের রপ্তানি খাত বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখানে কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। রপ্তানির গতিপ্রবাহ বাড়া-কমার মধ্য দিয়ে চলে, ফলে এ খাত নিয়ে ভয়ের কানো কারণ নেই।

রাজস্ব, প্রণোদনা প্যাকেজ, খেলাপি ঋণ, করোনা পরিস্থিতিসহ অর্থনীতির নানা ইস্যুতে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলছেন শামস মাহমুদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিউজবাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শাহ আলম খান।

অর্থনীতিতে এখন চ্যালেঞ্জগুলো কী?

করোনার আগে লোকজন নির্ভয়ে বাইরে বের হতো, সব জায়গায় ঘুরতে যেত। হোটেল-রেস্তোরাঁয় জমজমাট আড্ডা হতো। তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনাকাটা করত। দোকানে বাচ্চাদের নিয়ে গেলে সাধ্যমতো আবদার পূরণ করত। এখন সেটা হচ্ছে না, অনেকে পারছেও না।

করোনায় অনেকে চাকরি হারিয়েছে, বেতন কমিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। জনগণের আয় রোজগার কমায় ক্রয়ক্ষমতায় চিড় ধরেছে। এসবের প্রভাব পড়েছে সার্বিক ভোগব্যয়ে। ভোগ না বাড়লে অর্থনীতি বড় হয় না, টেকসইও হয় না। ছোট-বড় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারাও থাকেন ঝুঁকিতে। এতে ব্যবসারও প্রসার ঘটে না।

বছরে বিশেষ দিন কেন্দ্র করে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত আবর্তিত হয় এবং সব রকম কর্মকাণ্ড চলে। এবার পহেলা বৈশাখ, রোজা, দুই ঈদ এবং পূজায় বেচাকেনা তেমন হয়নি। বন্ধ রয়েছে বিয়েশাদিসহ শীতকালের সব সামাজিক অনুষ্ঠান। এমনকি পুনর্মিলনী, বার্ষিক সাধারণ সভার মতো অনুষ্ঠানগুলোও হচ্ছে না। এসবের প্রভাব পড়ছে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রপ্তানিখাতে কী প্রভাব ফেলতে পারে?

রফতানির বড় খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র। এ দুটি খাতে আগামীতে সেভাবে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। যদি হয়েও থাকে, সেটা কম সময়ের জন্য। গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ পাওয়ার আগেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ফলে ভয়ের কোনো কারণ দেখছি না, বরং সম্ভাব্য ধাক্কাকে সুযোগ হিসেবেই দেখতে চাই।

রপ্তানি বাজারে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- যখনই বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসে, ব্যক্তির অর্থ উপার্জনে সমস্যা হয়, তখন সব দেশের ভোক্তার জাতীয় চরিত্রে পরিবর্তন আসে। যেখানে পণ্যের কম দাম পায়, সেখানে চলে যান ভোক্তা। এ কারণে ক্রেতারাও তাদের ব্যবসায়ীক মডেলে পরিবর্তন আনেন এবং চাহিদা অনুযায়ী সস্তা পণ্য খোঁজ করেন।

বাংলাদেশ উৎপাদনমুখী দেশ। নিজেরাই পণ্য উৎপাদন, রূপান্তর ও মূল্য সংযোজন করে। সেই পণ্য রপ্তানি করা হয়। এ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা।

তবে এর জন্য কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, প্লাস্টিক, লেদার ইন্ডাস্ট্রি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ওষুধ শিল্পের মতো সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোকে সরকারের নীতিসহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি রফতানির পণ্যের বহুমুখীকরণ ও গুণগত মান বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সম্ভাবনা আছে। এর কারণ, প্রতিযোগী অনেক দেশ যেমন তুরস্ক, পাকিস্তান, মালয়েশিয়ার তুলনায় বাংলাদেশে পণ্যের উৎপাদন খরচ অপেক্ষাকৃত কম।

করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের পরেও কম দামে মানসম্মত পণ্য বাংলাদেশই সরবরাহ করতে সক্ষম। এ কারণে ওই সব দেশের রপ্তানি আদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হবে। চীনে উৎপাদন অনেক ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।

ভিয়েতনামেও রপ্তানির মৌলিক আইটেমগুলোর উৎপাদন খরচ বেশি। ফলে এসব দেশের রপ্তানি আদেশ বাংলাদেশেই স্থানান্তর হবে বলে আশা করছি। এসব বিবেচনা করলে আগামীতে দেশের রপ্তানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতি চাঙা রাখতে কতটা সহায়ক ভূমিকা রেখেছে?

ছোট-বড় সব ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাই করোনার কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এক্ষেত্রে ঘোষিত প্রণোদনা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

বড়দের জন্য ৩০ হাজার এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার তহবিল গঠন করা হয়েছে। দেখা গেছে, ৩০ হাজার কোটির প্যাকেজটি দ্রুত বাস্তবায়ন হয়েছে। ব্যাংকগুলো সরাসরি ঋণ বিতরণে জড়িত থাকায় এটা সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু এসএমইদের জন্য সেটি হয়নি। কারণ, এখানে ব্যাংকের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের এনজিওগুলোরও ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকলেও তাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। যে কারণে এসএমইদের ঋণ বিতরণে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়।

ছোট ব্যবসায়ীদের আরও পুঁজির দরকার আছে। আমরা আশা করছি, নতুন করে প্রণোদনা দেয়া হবে এবং এর মাধ্যমে এসএমই খাতে সৃষ্ট সংকটের সমাধান হবে। এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করতে পিকেএসএফ, ইফাদ বা এমএফএ এর মতো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে।

ঋণ পরিশোধে সরকার খেলাপিদের বার বার ছাড় দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, আপনার বক্তব্য কী ?

করোনা-পরবর্তী বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ কার্যক্রম নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক ঋণের কিস্তি স্থগিত রয়েছে। এর ফলে এখন অনেকেই ঋণখেলাপি হচ্ছেন না। যদিও শোনা যাচ্ছে, আরও তিন মাস বাড়ানো হচ্ছে।

কিন্তু কোনো না কোনো সময় এই স্থগিতাদেশ উঠাতেই হবে। এটা উঠে গেলেই দেশের আর্থিকখাতের স্বাস্থ্যের প্রকৃত চিত্র ধরা পড়বে। তখনই সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে। এখন যা বলা হচ্ছে সব অনুমাননির্ভর।

খেলাপিদের এই সুবিধা কেন দেয়া হচ্ছে?

এটা সরাসরি বলা যাবে না। কারণ, যারা আগে খেলাপি ছিলেন তারাও চেষ্টা করেছিলেন কীভাবে খেলাপিমুক্ত হওয়া যায়। তবে করোনায় সবার মতো তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই সরাসরি এ কথা বলা যাবে না যে, খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

গত বছর যখন সরকার একটা বিশেষ ক্যাটাগরিতে হাতেগোনা কিছু বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিয়েছিল, তখন আমরা সরকারকে বলেছিলাম- এ পদক্ষেপ নিয়মিত গ্রাহককে নিরুৎসাহিত করবে।

সরকার আমাদের কথা শোনেনি, উল্টো যারা ব্যাংকের খেলাপি তারাই কিছু বিশেষ সহায়তা পেয়েছে। এতে যারা কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করতেন না, তেমন ইচ্ছেকৃত খেলাপিরাও এখন খেলাপি বিবেচিত হচ্ছেন না। এখন তো করোনাকেন্দ্রীক নতুন সুযোগও তারা নিচ্ছেন। আশা করব সরকার এবার যদি কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নেয়, সেখানে সুষম ঋণ বণ্টনের একটা মানদণ্ড থাকবে।

রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি হতাশাজনক, এটা কীভাবে বাড়ানো যায়?

করোনায় প্রভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়েছে। ফলে রাজস্ব আহরণে বাধা থাকবেই। তাছাড়া করজালও ছোট। কয়েকটি কোম্পানির ওপর নির্ভর করে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় বাড়ানো যাবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওয়ায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আগের মতো আদায় হচ্ছে না। এ বিষয়ে এখন থেকে ভাবতে হবে সরকারকে।

করজাল বাড়ানোর অনেকগুলো উপায় আছে। স্মার্টফোন বাংলাদেশে কম বেশি সবার হাতে আছে, দামও খুব বেশি নয়। স্মার্টফোনের ভেতরে কিউআর কোড বসিয়ে করের আওতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এ প্রস্তাবটি নিয়ে ভাবতে পারে সরকার।

ইলেকট্রনিক লেনদেনকেও (ইওয়ালেট) জনপ্রিয় করার সুযোগ রয়েছে। এর ফলে আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং কর আদায় সহজ হবে।

এ বিভাগের আরো খবর