বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্র্যান্ডের চশমা কতটা আসল

  •    
  • ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:১৭

ব্যবসায়ীদের দাবি, ঢাকায় এখন আসল ব্র্যান্ডের চশমা বিক্রি হয় না বললেই চলে। কিছু দোকানে আছে এ ধরনের পণ্য, বাকি সব জায়গার চশমাই আসে চীন থেকে। ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি হলেও সেগুলো আসলে ব্র্যান্ডের পণ্যের নিখুঁত ‘কপি’।

চল্লিশ পেরোলেই চশমা জীবনের অংশ হয়ে যায় অনেকের। কারও কারও চোখে চশমা ওঠার বয়সটি আরও অনেক কম। তবে বয়স যাই হোক একটা সময়ে চশমা পরার চল ছিল কেবল প্রয়োজনের তাগিদে।

সেই সময় এখন অতীত। ফ্যাশনের দুনিয়ায় চোখের প্রয়োজন ছাড়াও অনেকে পরছেন চশমা। রাশভারী ফ্রেমের জায়গা দখল করে নিচ্ছে ছিপছিপে নানান ডিজাইন।

ঢাকার অলিগলিতে এখন চশমার দোকান, ফলে যখন তখন ফ্রেম অথবা গ্লাস বদলানো কোনো কঠিন কাজ নয়। তবে যে চশমাটি কেনা হচ্ছে তার দাম ঠিকঠাক আছে তো? নামি ব্র্যান্ডের নামে নকল চশমা গছিয়ে দিচ্ছেন না তো বিক্রেতা?

এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীতে চশমার আমদানিকারক ও পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।

পাটুয়াটুলী জামে মসজিদের পাশেই দেশের সবচেয়ে বড় চশমার পাইকারি-খুচরা বাজার। এখান থেকেই সারা দেশের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চশমা যায়।

গলির মতো রাস্তার দুই পাশের দোকানে মিলবে ৫০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা দামের চশমা। রোদচশমার দামের শুরু ১০০ টাকা থেকে। কিছু দোকানে এর চেয়েও দামি চশমা পাওয়া যায়। পাইকারি অথবা খুচরা, দুইভাবেই চলে বিক্রি।

চশমার বাজারের রমরমা অবস্থায় বেশ খুশি নুর অপটিকসের ম্যানেজার আতাউর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে মানুষ ছিল অসচেতন। বয়স চল্লিশ পঞ্চাশ হলেই কেবল চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা নিত।

‘এখন তো ছোট বাচ্চারাও চশমা পরতেছে। একটু অসুবিধা হলেই বাবা-মায়েরা ডাক্তার দেখাচ্ছেন। আর ডাক্তার দেখালেইতো চশমা। তাছাড়া অনেকে আবার ফ্যাশনের জন্যেও পাওয়ার ছাড়া চশমা পরে।’

মানুষের রুচি ঘন ঘন বদল হওয়াও প্রভাব ফেলছে চশমার বাজারে। আতাউর বলেন, ‘এখন মানুষ আর এক চশমা নিয়ে পড়ে থাকে না। একটা চশমা কেনার পর রুচির পরিবর্তন হয়। অনেকে আবার ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে নতুন চশমা নেয়।’

সব আসে চীন থেকে

প্যারাডাইস অপটিক্যালের বয়স সাত দশকের বেশি। পাটুয়াটুলীতে প্রথমদিকের পাঁচটি দোকানের একটি এই প্যারাডাইস। পরে যুক্ত হয় আরও তিন শ’র মতো দোকান।

দোকানের বর্তমান মালিক উনায়েস আব্দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে অনেকেই দেশের বাইরে থেকে অরিজিনাল ব্র্যান্ডের চশমা নিয়ে আসত। তবে এখন যা দেখছেন সব চায়না থেকে আসে। কোনোটাই আসল ব্র্যান্ডের না।’

উনায়েসের দাবি, ঢাকায় এখন আসল ব্র্যান্ডের চশমা বিক্রি হয় না বললেই চলে। কিছু দোকানে আছে এ ধরনের পণ্য, বাকি সব জায়গার চশমাই আসে চীন থেকে। ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি হলেও সেগুলো আসলে ব্র্যান্ডের পণ্যের নিখুঁত ‘কপি’।

পাটুয়াটুলীর অন্যতম পুরনো চশমার দোকান কামাল অপটিক্যাল সার্ভিস। এর ম্যানেজার নাইনুর রহমান বাকেরও একমত উনায়েসের দাবির সঙ্গে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চায়না থেকেই আসে সব। নানান রকম ব্র্যান্ডের নাম লিখে সেগুলো নিয়ে আসা হয়।’

অবশ্য ব্র্যান্ডের ভেবে চীনা পণ্য কিনে ফেললে হতাশ হওয়ার কিছ নেই বলেও মনে করছেন পাটুয়াটুলীর ব্যবসায়ীরা।

উনায়েস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চায়না শুনেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। চায়না থেকেও এখন ভালো চশমা আসে। তবে এর মধ্যেও কোয়ালিটি আছে, গ্রেড আছে। ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস বা মাস্টার কপি।’

তবে ‘ফার্স্ট ক্লাস’ চশমা চেনার পরিষ্কার কোনো কৌশল জানা নেই উনায়েসের।

‘এটা বোঝা আসলেও মুশকিল। আমরা নিজেরাও অনেক সময় হোলসেলে কিনতে গিয়ে ঠকে যাই। যেটা করতে হবে, বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনতে হবে।’

ব্র্যান্ডের কপির মধ্যেও আছে হাজার রকম তফাত। কারণ জানতে চাইলে জবাব, ‘কোনো কিছুর একটা কপি হলে ঠিক আছে, কিন্তু দশটা কপি হলে কি মান ঠিক থাকবে? একটা কপি যদি ১৫০০ টাকার জন্য বানানো হয়, আরেকটা যদি ৫০০ টাকায় দিতে হয়, তাহলে কোয়ালিটি কি ঠিক থাকবে?’

কোন চশমার চল বেশি

এ সময়ে কী ধরনের চশমা চলছে বেশি- জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

বিক্রেতা ও ক্রেতারা জানান, বিভিন্ন রঙের ছোপ আছে- এমন ফ্রেমের চশমা এখন তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এমনকি কাপড়ের মতো চেক বা স্ট্রাইপের ও পুঁতিযুক্ত ফ্রেমও বেশ চলছে।

দোকানিরা জানান, পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নীল, গোলাপি, বেগুনি, কমলা রঙের চশমাও ব্যবহার করেন অনেকে। কারও পছন্দ হ্যালো কিটি চশমা। হ্যালো কিটির বো-এর মধ্যে তারকাখচিত চশমাও পছন্দ অনেকের। তবে বয়স্করা এখনও পড়ে আছেন সেই এক রঙা কালো-খয়েরি ফ্রেমের চশমায়।

কামাল অপটিক্যালের নাইনুর রহমান বাকের বলেন, ‘৩২ বছরের সার্ভিসে অনেক কিছুই দেখেছি। আগে মানুষ পরতো মোটা ফ্রেমের কাচের চশমা। এখন মানুষ একটু হালকা চায়। কাচের বদলে এখন আসছে প্লাস্টিক।’

চশমার ফ্রেমের আকৃতিতেও এসেছে বৈচিত্র্য। এমনই একটির নাম ক্যাটস আই চশমা। বেড়াল চোখের আকৃতির এই চশমা ছাড়াও চারকোনা ফ্রেম বা একটু গোলাকৃতির ফ্রেমও চলছে বেশ।

ঢাকার যে কোনো দোকানের চেয়ে অনেক কমে কেনা যায় বলে অনেকেই একসঙ্গে অনেক চশমা কিনতে যান পাটুয়াটুলীতে।

এখানে প্রায় সব দোকানেই আছে চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা বানিয়ে নেয়ার সুযোগ।

লতিফ অপটিক্যালের মালিক জিন্নাত আরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডাক্তার দেখানো যায় ৬০০ টাকা ফি দিয়ে। একইসঙ্গে পুরনো চশমাও মেরামত করা হয় এক দিন সময় নিয়ে। এখানকার ৯০ শতাংশ দোকানেই এই সার্ভিস রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর