বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করতে চায় সরকার। আগামী বাজেটের আগেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্প্রতিবার সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী জানান, রিজার্ভের মূল ভিত্তি হচ্ছে রেমিট্যান্স। এটি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে আসে। চাহিদার চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এলে ব্যাংকগুলো তা বিক্রি করে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক তা কিনে নেয়। মূলত এ কারণে রিজার্ভ বাড়ে।
চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে নভেম্বর- এ পাঁচ মাসে ১১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ।
রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ অব্যাহত রাখতে পারলে আগামীতে রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে মনে করেন মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই ঠিক করেছিলাম ৩০ ডিসেম্বরে রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাব। কিন্তু তার আগেই অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে এটি জাতির জন্য বড় উপহার।’
প্রতি মাসে গড়ে চার বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় মিটিয়েও এই রিজার্ভ ফুরাতে অন্তত দশ মাস লাগবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকলে, ঝুঁকিমুক্ত মনে করা হয়।
সে হিসেবে বাংলাদেশ এখন বেশ স্বস্তিতে রয়েছে। তাই বাড়তি রিজার্ভ বিনিয়োগে আনতে সরকারি মহলে আলোচনা চলছে।
গত জুলাই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নিবার্হী কমিটির (একনেক) সভায় রিজার্ভ অব্যাহতভাবে বাড়ার প্রেক্ষিতে এর কিছু অংশ উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
মূলত তখন থেকে বিষয়টি নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। কীভাবে রিজার্ভ ব্যবহার করা যায়, এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে রিজার্ভের টাকা ব্যবহার করতে হলে পৃথক নীতিমালা লাগবে। এ জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদন লাগবে।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি ব্যয় কমেছে। অন্যদিকে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বিদেশি ঋণ এবং অনুদানও। এসব কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন রেকর্ড উচ্চতায়।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অনেক সময় অর্থনীতি দুর্বল হলেও রিজার্ভ বাড়ে, লেনদেনের ভারসাম্য শক্তিশালী হয়। তাই রিজার্ভের টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ তার।