বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নিয়ারদের ‘পৌষ মাস’

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৩:২২

গবেষণা প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ত্যাগের বিপরীতে মালিক ধনকুবেরদের এই ‘মুনাফাখোর’ মানসিকতা পুরোপুরি অনৈতিক এবং এটা অপরাধ। কর্মীদের সুরক্ষায় আরও বেশি মনোযোগ এবং তাদের ঝুঁকিভাতা ও সবেতন চিকিৎসা-ছুটি দেয়ারও সুপারিশ করেছেন গবেষকেরা।

বিশ্বে করোনা মহামারিতে যখন লাখো মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কোটি কোটি মানুষ, তখন উপচে পড়ছে শতকোটিপতিদের সম্পদ। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ-এর গবেষণায় এমনটিই জানা গেছে।

এই গবেষণা নিয়ে দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যখন করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝামাঝি তখন সে দেশের ৬৫০ বিলিয়নিয়ারের সম্পদ প্রায় এক লাখ কোটি ডলার বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে লকডাউন শুরুর সময় অর্থাৎ এ বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের হিসাব এটি।

কারা এই সম্পদ গড়ার কারিগর? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, খুচরা বিক্রি খাত, স্বাস্থ্যসেবা খাত ও খাদ্য সামগ্রী খাতের কর্মীরাই প্রথম সারিতে দাড়িয়ে, যাদের বেশিরভাগই এই মহামারির সময় কম মজুরিতে ও অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া এসব কর্মীদের শ্রমে ভর করে অকল্পনীয় করপোরেট সম্পদ গড়ে চলেছেন মালিকেরা।

কারা আসল সুবিধাভোগী?

দুই গবেষক চাক কলিন্স ও ওমর ওকাম্পোর গবেষণায় উঠে এসেছে ধনকুবেরদের বিপুল বৈভবের সঙ্গে কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবার চরম বৈষম্যের এই চিত্র। এসব কোম্পানির মালিক ও কর্মকর্তারা মুনাফা ও আয়ের উল্লম্ফনের পরেও তাদের কর্মীদের রক্ষায় চরম অনীহা দেখিয়েছেন বলে তাদের গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।

তালিকার সবার ওপরের নামটি অ্যামাজন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের। মধ্য-মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেজোসের সম্পদ ৭০ বিলিয়ন বা সাত হাজার কোটি ডলারের বেশি বেড়েছে। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০ হাজার কর্মী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।

একই চরিত্র বজায় রেখেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় রিটেইল করপোরেশন ওয়ালমার্ট-এর তিন মালিক- রব, জিম ও অ্যালিস ওয়ালটন। করোনা মহামারির সময়ে তাদের ব্যক্তিগত যৌথ সম্পদে যোগ হয়েছে ৪ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। অথচ কর্মীদের ঝুঁকি ভাতার দাবি নাকচ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান ইনস্টাকার্ট, যারা নিত্যপণ্য পরিবহনের ব্যবসা করে, এর মালিক অপূর্ব মেহতার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১০৬ কোটি ডলার। এই সম্পদের বেশিরভাগই বেড়েছে মহামারির সময়ে যখন প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার বাজারে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তবে কর্মীদের অভিযোগ, এই মহামারির সময় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের যথেষ্ঠ সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হয়নি।

টাইসন ফুডস-এর মালিক জন এইচ টাইসনের সম্পদ ৬০ কোটি ডলার বেড়েছে করোনার লকডাউন শুরু পর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানের হাজারের বেশি কর্মী কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার এবং কমপক্ষে পাঁচজন মারা গেছেন।

গবেষকেরা এ ধরনের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ‘ডেলিনকুয়েন্ট ডজন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তাদের প্রতিবেদনে যারা কর্মীদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত করে নিজেদের জন্য মুনাফার পাহাড় গড়েছে। একই দলের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে- টারগেট, ব্ল্যাক রক, ব্ল্যাকস্টোন, লিওনার্দ গ্রিন পার্টনারস, কোলবার্গ-কারভিস রবার্টস অ্যান্ড কো (কেকেআর), সেরবেরাস ক্যাপিটাল, বিসি পার্টনারস ও সিভিসি ক্যাপিটাল পার্টনারস। এদের অধীনে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, নিত্যপণ্য, দৈনন্দিন সেবামূলক কয়েকশ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কর্মী মহামারির সময়ে সঠিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ও ঝুঁকিভাতা থেকে বঞ্চিত বলে এই গবেষণায় উঠে এসেছে।

অথচ মহামারির এই আট মাসে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ৩৩ জন বিলিয়নিয়ার পেয়েছে। গবেষণায় ‘ডেলিনকুয়েন্ট ডজন’-এর ১০টি প্রতিষ্ঠানের মালিকের ব্যক্তিগত মোট সম্পদ বেড়েছে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। কিন্তু কর্মীদের সুরক্ষায় এসব ধনকুবেরদের উদাসীনতা চোখে পড়ার মতো।

গবেষণা প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ত্যাগের বিপরীতে মালিক ধনকুবেরদের এই ‘মুনাফাখোর’ মানসিকতা পুরোপুরি অনৈতিক এবং এটা অপরাধ। কর্মীদের সুরক্ষায় আরও বেশি মনোযোগ এবং তাদের ঝুঁকিভাতা ও সবেতন চিকিৎসা-ছুটি দেয়ারও সুপারিশ করেছেন গবেষকেরা। তবে এর সবই পুরোপুরি নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও প্রশাসনের নীতিমালার ওপর।

এ বিভাগের আরো খবর