ঋণ জালিয়াতিতে জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি মনে করছেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের প্রণোদনা সুবিধা দেয়া ঠিক হবে না।
খেলাপি ঋণ সম্পর্কে তার অভিমত, এটি কমেছে, তবে তা কাগজে-কলমে। করোনার মধ্যে চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হতে পারে বলে আশাবাদী তিনি।
করোনাকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্সসহ অর্থনীতির নানা ইস্যুতে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজেনেসের অধ্যাপক ড. সালেহউদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু কাওসার ও শেখ শাফায়াত হোসেন।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এ পর্যন্ত ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এসব প্যাকেজ বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জগুলো কী?
করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে একেবারে তছনছ করে দিয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আমরা অনেক পণ্য আমদানি-রফতানি করি। বৈদেশিক লেনদেন করি। দেশের অভ্যন্তরে শিল্প-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে আগে থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, অনিয়ম –দুর্নীতিসহ নানাবিধ সমস্যা ছিল, করোনার মধ্যে তা আরও প্রকট হয়েছে।
আমাদের সমস্যা অন্যদের তুলনায় একটু বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে সরকার। আমি মনে করি, প্যাকেজগুলো মোটামুটি বিস্তৃত। আমাদের যে পরিমাণ সম্পদ আছে সে তুলনায় এসব প্যাকেজ যথাযথ। সমস্যা হলো, প্যাকেজগুলো ব্যাংকনির্ভর। ফলে এই প্যাকেজ বাস্তবায়নই মূল চ্যালেঞ্জ।
প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নগদ জমার বাধ্যবাধকতা (সিআরআর) ও নীতি সুদহারে ছাড়সহ নানা ধরনের সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর নগদ অর্থ চলে এসেছে। ব্যাংকগুলো বলতে পারবে না যে, তারা টাকার অভাবে ঋণ দিতে পারছে না। চার-পাঁচ মাসের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণের গতি অত্যন্ত ধীর। ফলে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া রফতানি ও কৃষিখাত যথাযথভাবে অগ্রাধিকার পায়নি, ফলে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। অনেকে চাকরি হারিয়েছে, অনেকে অর্ধেক বেতনে কাজ করছে। রফতানি খাত কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও তৈরি পোশাক খাতের বৈচিত্র্যকরণ না হওয়ায় এ খাতেও কিছুটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধি আশাব্যাঞ্জক, কিন্তু তা ধরে রাখা কঠিন হবে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখনও সেভাবে আসেনি।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছেপ্রণোদনা তহবিলের বেশি সুবিধা পাচ্ছেন বড় ব্যবসায়ীরা। ক্ষুদ্র উদ্যাক্তরা তুলনামূলক কম সুবিধা পাচ্ছেন। অথচ জিডিপির ২৫ শতাংশ অবদান রাখা এসএমই খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপনার বক্তব্য কী?
এটা দুঃখজনক ব্যাপার। কেবল জিডিপির প্রবৃদ্ধি দেখলে হবে না, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৮৫ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে আসে। এসব খাতে যথাযথভাবে প্রণোদনা না দিলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না। এখানে বড় ঘাটতি আছে।
বড় শিল্পের প্রণোদনার ঋণ বিতরণ ইতোমধ্যে শেষ। ব্যাংক কর্মকর্তারা বড় গ্রাহকদের প্রতি বেশি নমনীয়। এটা ঠিক নয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা গতানুগতিক কাজ করছেন। তাদের উচিত এখন যুদ্ধের ময়দানে যেভাবে সবাই কাজ করে, তেমনটা করা।
ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যারা কখনো ঋণ পায়নি, বেশি টাকা দরকার তাদেরই। অথচ, ব্যাংক বলছে, লেনদেনের রেকর্ড না থাকলে ঋণ পাবে না।
এই অজুহাত দেখালে হবে না। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিটি ব্যাংককে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ বিতরণে আলাদা করে নির্দেশ দিতে হবে।
এসএমই খাতের সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংককে আলাদা করে বসতে হবে। দলবল নিয়ে বসে কোনো কাজ হয় না। আমি গভর্নর ছিলাম। এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে। সেখানে সব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসলে তারা অনেক নীতি বাক্য বলে একসময় চলে যাবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রেক্ষাপটে বাড়তি প্রণোদনার দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
এ দাবি তারাই করছে, যারা প্রণোদনার সুবিধা পেয়েছে। যারা যত সুবিধা পান, তত বেশি সুবিধা চান।
কারা নতুন করে দাবি তুলেছে তা সবাই জানে। ছোট-মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের দাবি করতে পারছে না। তাদের কণ্ঠ অনেক ক্ষীণ।
আমি মনে করি, বড়দের জন্য প্যাকেজ সুবিধা চট করে বাড়ানো ঠিক হবে না। কারণ, এর জন্য সরকারের বাজেটের বিষয় রয়েছে। অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা আছে। যেটা করা দরকার তা হলো, বর্তমান প্যাকেজের আওতায়, ছোটদের জন্য দেয়া বরাদ্দ দ্রুত শেষ করা।
করোনার মধ্যে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও খলাপি বলা যাবে না। ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেকই সমালোচনা করে বলেছেন, খেলাপিদের আরও ছাড় দিয়েছে সরকার। আপনি কী মনে করেন?
কিছুদিন পর আবার দাবি উঠবে এই সুবিধাও আরও বাড়িয়ে দাও। যত বেশি সুবিধা দেবে সরকার, ততই চাইবে ঋণ খেলাপিরা।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, করোনার আগে যেসব ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি টাকা ফেরত দেয়নি, কিংবা পরিচালনার ভুলে যাদের ব্যবসা ডুবে গেছে- তারা যদি এখন প্রণোদনা নিয়ে ব্যবসা চালাতে চায় সেটা কঠিন হবে। এদের পেছনে টাকা ঢালা অপচয় হবে। যাদের ব্যবসা সম্ভাবনাময়, তাদেরকে সুবিধা দিলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
সুবিধার সময় আরও বাড়ানো উচিত বলে কি আপনি মনে করেন?
একটা সময়ের পর এ সুবিধা তুলে নিতে হবে। সুবিধার তো শেষ নেই। যত বেশি দেয়া হবে, প্রত্যাশা ততই বাড়বে। এ বিষয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানে আসতে হবে।
২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ১১ হাজার কোটি টাকা। সেটা এখন বেড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
একের পর এক ঋণ অবলোপন সুবিধা দিয়ে ব্যাংকগুলোর স্থিতিপত্র (ব্যালেন্স শিট) থেকে কু-ঋণ বাদ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে (প্রভিশনিং) বড় ধরনের ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বেশি মুনাফা দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এভাবে কাগজে-কলমে খেলাপিঋণ কম দেখানো হচ্ছে।
এখন সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া দরকার ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার ওপর। তাছাড়া ঋণজালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে খেলাপি ঋণ বাড়তেই থাকবে।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন ব্যবসার স্বার্থে এ ছাড় দেয়া হয়েছে। আপনি কি মনে করেন সরকারের এ সিদ্ধান্তে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে?
কথাটা ঠিক নয়। যদি ধরে নেই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ছাড় দেয়া হয়েছে তাহলে এর প্রতিফলন কোথায়? কর্মসংস্থান কি বেড়েছে? মানুষের আয় কি বেড়েছে? ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা কি ঘুরে দাঁড়িয়েছে? এখনো তেমন কিছু আমরা দেখতে পাইনি।
করোনা মহামারির মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ অর্জনকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
রিজার্ভ বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে। রফতানির তুলনায় আমদানি এখন কম। এটা একটি বড় কারণ। নিট বৈদেশিক আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি অবদান রাখছেন প্রবাসীরা। আমি তাদের বলি ‘আনসাং হিরো’। তাদের অনেকেই হয়ত দেশে ফিরে আসবে বলে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।
রফতানি খাতে সরকারকে অনেক ধরনের প্রণোদনা দিতে হয়। সে তুলনায় রেমিট্যান্সে প্রণোদনা কম। তবে শিল্প খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কম বলে রিজার্ভ বাড়লেও তাতে লাভ নেই।
সার্বিক অর্থনীতিতে এই রিজার্ভের কোনো প্রতিফলন দেখছি না। হ্যাঁ, একটা ইতিবাচক দিক হচ্ছে রিজার্ভ বাড়ায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী হচ্ছে ।
করোনা পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি কমেছে অনেকটাইব্যাংকে অলস টাকা থাকার বিষয়টি যেমন, বাড়তি রিজার্ভও আমার কাছে তেমন মনে হয়। তার মানে আবার এই নয় যে, বাড়তি রিজার্ভ হঠাৎ করে অন্য কোথাও বিনিয়োগ কিংবা অবকাঠামো খাতে ব্যয় করতে হবে। সেটা আবার হিতে বিপরীতে হতে পারে।
ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে একটি কমিশন গঠনের দাবি বহু পুরানো। প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে সরকার। এ কমিশন করা কী উচিত?
অবশ্যই দরকার। কেন সরকার পিছিয়ে গেল বুঝলাম না। ব্যাংক খাতে নানা ধরনের সংস্কারের ফলে ২০০৯ সালের আগে এ খাতের ইতিবাচক অবদান ছিল।
গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতের আইনি কাঠামো কিছুটা পেছনে হেঁটেছে। আইন সংশোধন করে ব্যাংক পরিচালনায় একই পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণ ও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এটা মোটেই ঠিক হয়নি। এজন্যই কমিশন দরকার।
সরকার যদি কমিশন না করতে চায়, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে একটি টাস্কফোর্স করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ব্যাংক খাতের বিভিন্ন মানদণ্ড নির্ধারণ ও নীতি কাঠামো প্রণয়নের কাজ হতে পারে।
তবে হইচই করে বা ঢাকঢোল পিটিয়ে কোনো কিছু করার দরকার নেই। এখানে আলোচনা হবে খোলামেলা। কয়েকজন মিলে গোপনে বৈঠক করে পরে একটি প্রতিবেদন দিলে, তা আলোর মুখ দেখবে না।
আইএমএফের সাম্প্রতিক ওয়ার্ল্ড আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের শীর্ষ তিনে থাকবে বাংলাদেশ। মাথাপিছু জাতীয় আয় ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে...
গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভালো করছে। অন্য অনেক দেশের তুলনায় সত্যিই ভালো করছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রবৃদ্ধির এই সংখ্যাটি একটি সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই সংখ্যাটি মানুষের পুরোপুরি কল্যাণ বহন করে না।
মানুষের জীবন যাত্রার মান, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা, যাতায়াতের সুব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন-এসব সূচকের সঙ্গে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সামাঞ্জস্য নয়। প্রবৃদ্ধি বেশি হলেও মানুষের জীবন মানে যে উন্নতি হচ্ছে তেমনটি নয়। প্রবৃদ্ধির সুফল সবাই যাতে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
সামনে অর্থনীতির প্রধান চ্যলেঞ্জগুলো কী?
অর্থনীতি কিছুটা মন্থর হলেও গতিহীন হয়ে পড়েনি। এটা একটা ভালো দিক। তবে কয়েকটি খাত যেমন- কৃষি ও কর্মসংস্থানে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল শস্য নয়, প্রযুক্তিগত চাষাবাদ, উদ্যানতত্ত্ব এসব খাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। কেননা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা একটা বড় বিষয়। শুধু চালে স্বয়ংসম্পন্ন হলে চলবে না, অন্য খাতেও সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠানো এবং যারা দেশে ফিরে আসছে তাদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করতে হবে।
আইএমএফ সম্প্রতি বলেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতি ফের শ্লথ হয়ে গেছে। আপনি কী মনে করেন?
বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রথম থেকেই শ্লথ হয়ে পড়েছে। চীন ছাড়া সব দেশেরই অবস্থা একই। সেক্ষেত্রে আগের মতো জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮/৯ শতাংশ হবে না। তবে অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা ও কর্মসংস্থানে বেশি নজর দিতেই হবে।
দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির যে ধারা তার সঙ্গে পুঁজিবাজারের তেমন সামঞ্জস্য নেই, আপনার বক্তব্য কী?
এটা ঠিক যে, আমাদের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সেভাবে হয়নি। অন্যান্য দেশে দেখা যায়, সেখানকার অর্থনীতি বাড়তে থাকলে পুঁজিবাজার অর্থায়নের বড় কেন্দ্রে পরিণত হয়। আমাদের দেশে এটা উল্টো। এখানে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সবাই ব্যবসা করতে চায়, পরে খেলপি হয়। পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন ব্যাংক নির্ভর শিল্পখাত দেখা যায় না।
সময় এসেছে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের দিকে যাওয়ার। এখান থেকে অর্থ নিয়ে বড় শিল্প কারখানায় দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে, কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা সেদিকে যেতে পারছি না।
পুঁজিবাজারের সমস্যা আছে। এখানে তথ্য পাচার ও নানা ধরনের কারসাজি হয়। দুইবার বড় কেলেঙ্কারি হলেও কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের কোনো বিচার হয়নি।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারি দিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করা যাবে না। ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আরও আসতে হবে। বন্ড বাজার শক্তিশালী করতে হবে। বাজারে এখন সবই সরকারি বন্ড, করপোরেট খাতে বন্ড বাড়াতে হবে।
চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ ভিন্ন ভিন্ন পূর্বাভাস দিয়েছে। দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আপনার মতে এবার জিডিপি কত হতে পারে?
আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পূর্বাভাস নিয়ে আমি কখনোই সন্তুষ্ট নই। এসব সংস্থার হিসাবে বিস্তর ব্যবধান। তবে চলতি অর্থবছরে সরকার নির্ধারিত ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না। আমার ধারণা, এবার প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হতে পারে।
করোনার মধ্যে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে তা হবে অনেক ভালো। কারণ, পৃথিবীর অনেক দেশেরই এবার ২ থেকে ৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে না, সে দিক থেকে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।