সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আগ্রহের কথা জানিয়েছে ফিনল্যান্ড। দেশটির উদ্যোক্তারা এখানে কারখানা স্থাপনেও আগ্রহী।
বুধবার রাজধানীর মতিঝিলের এফবিসিসিআই-আইকন টাওয়ারে `ফিনল্যান্ড বাংলাদেশ বিজনেস ইভেন্ট অন বাইল্যাটেরাল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ ইন দ্য অনগোয়িং গ্লোবাল প্যানডেমিক অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ফিনচ্যামের প্রেসিডেন্ট ও সিইও জুহো রমাকাম্মেয়ি এ আগ্রহের কথা জানান।
তিনি বলেন, ফিনিশ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে নতুন নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগের খোঁজ চালাচ্ছে, সেটি এমন এক সময়, যখন দেশটি নিজেই নিজের অর্থনীতিকে আরও আধুনিক করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাই ফিনিশ উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ আগ্রহও জোরালো হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, তবে আমরা এই বিনিয়োগটি করতে চাই পিপিপির ভিত্তিতে। এখন দুই দেশকেই আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রকল্প এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্টের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে উপায় বের করতে হবে। পাশাপাশি আমরা দুদেশের ব্যবসায়িক পর্যায়ে সম্পর্ক জোরদারের নতুন উপায় খুঁজে দেখছি। এজন্য আমরা উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাইল্যাটেরাল বিজনেস কাউন্সিল তৈরিতে প্রস্তুত আছি বলেও জানান তিনি।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও ফিনিশ চেম্বার অব কমার্সের (ফিনচ্যাম) যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফিনল্যান্ডের ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন অ্যান্ড ফরেন ট্রেড বিষয়ক মন্ত্রী ভিলে স্কিনারি। বাণিজ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন অতিথি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘বাইল্যাটেরাল ভ্যালু চেইন ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে ফিনল্যান্ডের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দক্ষতা উন্নয়ন, এডিআর, ফলিত গবেষণাসহ বিভিন্ন খাত এবং বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার মাধ্যমে আমরা বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ফিনিশ ওয়ার্টসিলার মতো প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থাপন করে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি ও সংযোজনের সুযোগ নিতে পারে; যা তারা এখান থেকে স্থানীয় বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও রফতানি করতে পারবে।
ফজলে ফাহিম বলেন, ফিনল্যান্ড থেকে যেসব পণ্য বাংলাদেশে আসে, তারা সেগুলো ধীরে ধীরে বাংলাদেশে তৈরি করা শুরু করতে পারে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়, সেগুলো বাংলাদেশে তৈরি করে এখানেই ব্যবহার করতে পারে। একই সঙ্গে আশপাশের বাজারে রফতানি করতে পারে। শুরুতে বড় আকারে না হলেও ছোট আকারে তারা এ ধরনের উদ্যোগ নিতেই পারে। একইভাবে বাংলাদেশের কৃষিখাত, ফিনটেক, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নেও ফিনল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসতে পারে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, যেসব ইউরোপীয় বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, তার মধ্যে ফিনল্যান্ড অন্যতম। বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ডের বাণিজ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। বাংলাদেশের রফতানিকারীরা ফিনল্যান্ডে আরও পণ্য রফতানির সুযোগ নিতে আগ্রহী। করোনার কারণে পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কাঁচামাল আমদানি যেমন কমেছে, তেমনি শিল্প উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বাণিজ্য আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে মোকাবিলা করা উচিত।
ফিনল্যান্ডের ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন অ্যান্ড ফরেন ট্রেড বিষয়ক মন্ত্রী ভিল স্কিনারি বলেন, ‘করোনার আগে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ধীর হলেও বাড়ছিল। আমরা আশা করি, দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘ফিনল্যান্ডে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ভালো সুযোগ রয়েছে। আমরা সম্মিলিতভাবে আরও ভালো কিছু করতে পারি।’
ফিনচ্যামের সিনিয়র অ্যাডভাইজার জেনি আইসোলা বলেন, আমরা দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে অভিন্ন ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক স্থাপন নিয়ে আলোচনায় করতে আগ্রহী।
ওয়ার্টসিলার প্রেসিডেন্ট ও সিইও জাকো এস্কোলা বলেন, ’৯০ দশকের শুরুর দিকে আমরা বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করি। ধীরে ধীরে আমরা এগিয়েছি। এখন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের যন্ত্রপাতির সরবরাহে নেতৃত্ব স্থানীয় অবস্থানে আছি। ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার জন্য আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আরও বেশি নজর দিতে হবে। আমরা এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
মেকালিফটের সিইও জেনি কালিওমাকি বলেন, বাংলাদেশ খুব দ্রুত উন্নতি করছে। এ দেশটি আমাদের জন্য সম্ভাবনায় বাজার। বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরেও মেকালিফটের সরঞ্জাম ব্যবহার হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফিনল্যান্ড সহযোগিতা করতে পারে।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা সোনিয়া বশির কবির, অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, ফিনচ্যামের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট টিমো ভিওরি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।