চিনিকল বন্ধ হলেও কারও চাকরি যাবে না এবং আখ কেনা বন্ধ হবে না বলে সরকারের ঘোষণার পরেও বন্ধ করা ছয় চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন থামছে না।
সরকার স্পষ্টত সিদ্ধান্ত জানালেও এখনও শ্রমিকদের কাছে সে বার্তা পৌঁছেনি। শ্রমিকদের একটি অংশ জানে না সরকারের এই সিদ্ধান্ত। কেউ কেউ জানলেও চাকরির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়ে আস্থা রাখতে পারছেন না। ফলে বন্ধ ঘোষণার তৃতীয় দিন বুধবারও বিক্ষোভ হয়েছে পাবনা ও পঞ্চগড়ে। ঘোষণার দিন গত সোমবারও বিক্ষোভ হয় পাবনা, ফরিদপুর ও চুয়াডাঙ্গায়।
তবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন-বিএসএফআইসির কোম্পানি সচিব আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘যদি চাকরির প্রশ্নে আন্দোলন হয়ে থাকে, তাহলে বলবো- তারা (শ্রমিকরা) না জেনে আন্দোলন করছেন। কারণ, বন্ধ চিনিকলে কর্মরত কোনো শ্রমিকের চাকরি এখনও যায়নি। যাবেও না। সবার চাকরি আছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন লোকসানের কারণে সরকার এসব চিনিকল বন্ধ রাখায় তাদের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্য চিনিকলে বদলি করা হলে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হবে। এ কারণেই হয়তো আন্দোলন। সেটিও এখন কমে গেছে।’
এখন কী পদক্ষেপ নেবেন- এমন প্রশ্নে কোম্পানি সচিব বলেন, ‘বুঝিয়ে-শুনিয়ে আন্দোলন প্রশমনে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রধান কার্যালয় থেকেও মনিটরিং করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বিএসএফআইসির অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার বার্তা দেয়া হয়েছে। তারা সে অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেবেন।’
লোকসান কমাতে সম্প্রতি কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর (রংপুর), রংপুর ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসএফআইসি। এসব চিনিকলে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আখমাড়াই বন্ধ করা হয়েছে।
লোকসানের কারণে বন্ধ করে দেয়া ছয় চিনিকলের কেউ চাকরি হারাবেন না, কল বন্ধ থাকলেও আখ কেনা হবে- গত সোমবার সরকারের এমন ঘোষণার পরও কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা।
নিউজবাংলার স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান, ঘোষণার দুই দিন পরও পাবনা সুগার মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে স্মারকলিপিও দিয়েছে।
বিক্ষোভ হয়েছে পঞ্চগড়েও। সেখানকার শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই দাবিতে টানা নয় দিন চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মসূচি। সোমবার বিক্ষোভ হয় চুয়াডাঙ্গায়। দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির শ্রমিকরা সেদিন ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতি, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেয়।
এছাড়া বন্ধ ঘোষণার দিন বিক্ষোভ করেন ফরিদপুর চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরাও। বিক্ষোভ চলাকালে মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা দাবি করেন, তাদের বিপুল পরিমাণ পাওনা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া আখ মাড়াই শুরুর নির্ধারিত দিন রয়েছে ২৫ ডিসেম্বর। এই মুহূর্তে মিল বন্ধের চক্রান্তে দিশেহারা হয়ে পড়ার কথা জানান তারা।
এ বিষয়ে পাবনা সুগার মিল ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘এখানে সাড়ে ছয়শ শ্রমিক ও সাড়ে ছয় হাজার চাষি আছেন। মিলটি ২৫ ডিসেম্বর চালু করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা দিশেহারা। বন্ধের বিষয়টি আমরা জানি না। তবে এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত যদি আমাদের জানানো হয়, তাহলে আমরা বৈঠক করে আমাদের অবস্থান জানাব।’
পাবনা সুগার মিল ওয়ার্কাস ইউনিয়ন সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘রুটি রুজির জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি। মিল বন্ধ হলে খাব কী?’
পঞ্চগড়ের শ্রমিক নেতারাও জানান, চাকরি না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা তারা শোনেননি। আর এই ঘোষণায় তাদের আস্থাও নেই। তাদের আশঙ্কা, সরকার এখন মুখে চাকরি যাবে না বললেও কিছুদিন পরে ঠিকই চলে যাবে।
পঞ্চগড় চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, ‘সরকার পাটকলের ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছিল। কিন্তু কথা রাখেনি। চাকরি না যাওয়ার কথা বললেও কোনো এক সময় সরকার তার কথা থেকে সরে পড়বে।’