বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রিজেন্ট এয়ারের ফ্লাইট বন্ধে সংকটে ৮০০ কর্মী

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৯:৪৭

মার্চের শুরুতে কর্মীদের তিন মাসের অবৈতনিক ছুটিতে পাঠায় এয়ারলাইন্সটি। এরপর আর ফ্লাইটে ফেরেনি রিজেন্ট। ছুটি বাড়াতে বাড়াতে নেয়া হয়েছে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত।

এ বছরের মার্চ থেকেই বেসরকারি এয়ারলাইন্স রিজেন্ট এয়ারের ফ্লাইট বন্ধ। প্রতিষ্ঠানটির বহরে এখন মাত্র দুটি উড়োজাহাজ আছে। সেগুলোও নেই ওড়ার অবস্থায়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাকি নয় মাসের। তার ওপর বাড়তি বোঝা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিভিন্ন সেবা ফি ও সারচার্জের বিপুল টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ ছাড়িয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি। এ অবস্থায় এয়ারলাইন্সটি আবারও ফ্লাইটে ফিরবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। অবশ্য এটির কর্তৃপক্ষ বলছে, বেবিচকের অনুমতি পেলে জানুয়ারিতে ফ্লাইট শুরুর প্রস্তুতি আছে তাদের।

রিজেন্ট এয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর। এক দশক যেতে না যেতে জোর ধাক্কা খেল এয়ারলাইন্সটি। বন্ধ হওয়ার আগে দেশের ভেতরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্য কলকাতা, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, মাসকাট ও দোহায় ফ্লাইট চালাচ্ছিল এয়ারলাইন্সটি।

রিজেন্ট এয়ারের বেশ কয়েকজন বিমান চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এয়ারলাইন্সটির সংকট শুরু গত বছর থেকে। তবে তা প্রকট আকার ধারণ করে এ বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বৈমানিক নিউজবাংলাকে জানান, মার্চের শুরুতে হঠাৎ এক নোটিশের মাধ্যমে কর্মীদের তিন মাসের অবৈতনিক ছুটিতে পাঠায় এয়ারলাইন্সটি। এরপর আর ফ্লাইটে ফেরেনি রিজেন্ট। সেই ছুটি বাড়াতে বাড়াতে নেয়া হয়েছে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত। এতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৮০০ কর্মীর।

ওই বৈমানিক বলেন, ‘এ সময় করোনার জন্য সবকিছু স্থবির। তাহলে কর্মীরা যাবে কোথায়? পাইলটদের কোনো এনওসিও (অনাপত্তিপত্র) দেয়া হলো না। এটি পেলে হয়তো অন্য কোথাও চাকরির চেষ্টা করা যেত। গত কয়েক মাসে মালিকপক্ষের কেউ খোঁজও নেয়ার চেষ্টা করেনি। জানার চেষ্টা করেনি আমরা কীভাবে বেঁচে আছি।’

রিজেন্টের আরেক বৈমানিক বলেন, ‘২০১৯ এর আগের ৩ বছর প্রতিটি ফ্লাইটে ৯০ শতাংশ হারে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। তাহলে এই লাভের টাকা কোথায় গেল?’

ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পর অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাই চাকরি ছেড়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন প্রধান নির্বাহী ইমরান আসিফও। এয়ারলাইন্সটির বিদেশি ১১ বৈমানিকও এরই মধ্যে নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন।

ফ্লাইট বন্ধের আগে এটিতে কর্মরত ছিলেন ৫১ জন দেশি পাইলট। এর মধ্যে ১৬ জন ক্যাপ্টেন, বাকিরা ফার্স্ট অফিসার।

এয়ারলাইন্সটির বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিষ রায় চৌধুরী নিউজবাংলাকে জানান, আবার ফ্লাইট শুরু করতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন তারা। তবে কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দেয়ায় ফ্লাইট শুরু করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে এয়ারলাইন্সের কোনো আয় নেই। আয় না থাকলে কর্মীদের বেতন দেব কীভাবে?’

বেবিচকের দেনা শোধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে প্রতি মাসে ৫ কোটি টাকা করে শোধ করা হবে। শুরুতে মূল ফি পরে সারচার্জ শোধ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘কর্মীদের যাদের বকেয়া রয়েছে, তাদের টাকা কীভাবে শোধ করা যায় সেটিও আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু ফ্লাইটের অনুমতি না পেলে কোনো কিছুই সম্ভব হচ্ছে না।’

এ নিয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রিজেন্টের মতো একটি এয়ারলাইন্সের এ পরিণতি দুঃখজনক। আমার মনে হয় তাদের একটা সুযোগ দেয়া উচিত।

‘সরকার তাদের সারচার্জ মওকুফ করতে পারে। এটা এভিয়েশন শিল্পের জন্যই ভালো হবে। সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেটির সুযোগও রিজেন্ট নিতে পারে। আর রিজেন্টের উচিত তার কর্মীদের বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করা। সেটি কীভাবে হবে সে বিষয়ে কর্মীদের সাথে তারা আলোচনা করতে পারে।’

অবশ্য বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মহিবুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রিজেন্ট সরকারের দেনা শোধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের কর্মীদের পাওনা শোধ করার জন্য বেশ কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। ফ্লাইট শুরুর অনুমতি চাইলে আগে সেগুলো ঠিক করতে বলা হবে।’

জানুয়ারিতেই ফিরতে চায় রিজেন্ট

রিজেন্ট এয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিষ রায় চৌধুরী জানান, অনুমতি পেলে আগামী বছরের জানুয়ারিতেই ফ্লাইট শুরু করতে চান তারা।

‘আমাদের পরিকল্পনা আছে, শুরুতে শুধু অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট চালানো হবে। পরে পরিস্থিতি একটু ভালো হলে মাসকাট, দোহা ও কলকাতায় ফ্লাইট চালানোর প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে’, বলেন তিনি।

আশিষ জানান, বর্তমানে বহরে থাকা উড়োজাহাজ দুটির মধ্যে একটি এ মাসেই সি-চেকের জন্য পাঠানো হচ্ছে। আর অন্যটির ইঞ্জিন আনা যাচ্ছে না ফ্লাইটের অনুমতি না পাওয়ায়।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চারটি এটিআর সেভেনটি টু মডেলের উড়োজাহাজ আনতে চাই। এখন সবকিছুই নির্ভর করছে অনুমতি পাওয়ার ওপর।’

গত প্রায় দুই যুগে দেশে ১০টি বেসরকারি এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরু করলেও এখন টিকে আছে মাত্র দুটি। এ সময়ের মধ্যে একে একে পাখা গুটিয়েছে অ্যারো বেঙ্গল, এয়ার পারাবত, রয়েল বেঙ্গল, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইন্স, বেস্ট এয়ার ও ইউনাইটেড এয়ার। এদের মধ্যে শুধু জিএমজি ও ইউনাইটেড আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালাত।

এ বিভাগের আরো খবর