করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নতুন করে প্রণোদনা চেয়েছেন দেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকেরা। পাশাপাশি প্রথম দফায় ঘোষিত প্রণোদনা ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধে ছয় মাসের পরিবর্তে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা এবং ঋণ শোধের মেয়াদ দুই বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর করার দাবি আবার তুললেন তারা।
সোমবার বিজিএমইএ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে সংগঠনের সভাপতি রুবানা হক এ দাবি জানিয়ে বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের পোশাক খাতে। এ ধাক্কা সামলাতে বাড়তি প্রণোদনা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
‘করোনা পূর্ববর্তী এবং চলমান পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পের বাস্তবতা’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক আরও বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের জন্য এ বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে রফতানি আয়ের প্রধান খাতটি আবারও বিপর্যয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এর আগে প্রথম দফায় করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত সুরক্ষায় চার দফায় মোট সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ দিয়েছিল সরকার। তখন এই টাকা দিয়ে পোশাক কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এই সময়োচিত পদক্ষেপের কারণেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে পোশাকখাত। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আবার লকডাউনে ফিরে যাওয়ায় ক্রেতারা নতুন করে ক্রয়াদেশ দিতে তেমন আগ্রহী নয়। কোনো কোনো আদেশের বিপরীতে টাকা পরিশোধের সময় বিলম্বিত করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের পোশাক শিল্প মালিকেরা আবারও শঙ্কিত।
রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। বাংলাদেশের পোশাকখাতের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়েবিনারে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘করোনার কারণে ব্যবসা পরিস্থিতি, বিশেষ করে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিলের তথ্যাদি পাওয়ার জন্য আমরা ১৯ মার্চ একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করি। যেখানে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ বাতিল/স্থগিতের তথ্য প্রদান করেন। এপ্রিলের শেষ নাগাদ ১ হাজার ১৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান এ পোর্টালে ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিতের তথ্য প্রদান করেন, যার মাধ্যমে ৬৫টি দেশের প্রায় ১৩০০ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ক্রয়াদেশ বাতিলের তথ্য পাওয়া যায়।’
তিনি জানান, ‘এ পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ ক্রেতাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ এবং চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে জুন-আগস্ট সময়ে বাতিলকৃত ক্রয়াদেশের প্রায় ৯০ ভাগ পুনর্বহাল করতে পেরেছে। যদিও এতে কারখানাগুলোকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, মূল্যছাড় ও ডেফার্ড পেমেন্ট (বিলম্বে পরিশোধ) মেনে নিতে হয়েছে।’
ওয়েবিনারে জানানো হয়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ২০২০ সালের মার্চ-জুলাই পর্যন্ত তৈরি পোশাকের রফতানি ৩৪ দশমিক ৭২ ভাগ হ্রাস পায়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রফতানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তা আবার হুমকির সম্মুখীন। চলতি বছরের অক্টোবরে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি কমেছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়া ১-২০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়কালে রফতানি কমেছে গড়ে ৬ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক আরও বলেন, ‘গত বছর এই সময়ের তুলনায় অক্টোবরে পোশাক রফতানি কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে ৮ শতাংশ, জার্মানিতে ১০ শতাংশ, স্পেনে ৬ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৫ শতাংশ, ইতালিতে ৩০ শতাংশ ও জাপানে ২৮ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের শুধু রফতানিই কমেনি, সঙ্গে নজীরবিহীন দরপতনও ঘটেছে তৈরি পোশাকের। ২০১৪-২০১৯ এই পাঁচ বছরে আমাদের পোশাকের রফতানি মূল্য হারিয়েছে গড়ে বছরের প্রায় ১ দশমিক ৭৯ ভাগ। গত সেপ্টেম্বর মাসে সমগ্র বিশ্বে আমাদের পোশাকের দরপতন হয় ৫ দশমিক ২৩ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই দরপতন ছিল ৪ দশমিক ৮১ ভাগ। মাসওয়ারি হিসেবেও দরপতন অব্যাহত আছে। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে ৪ দশিমক ১৫ ভাগ এবং নভেম্বর মাসের ১-২০ তারিখ পর্যন্ত ছিল ৪ দশমিক ৯২ ভাগ।’