সরকারি ছয়টি চিনিকল বন্ধের ঘোষণা দিলেও কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা শ্রমিকের চাকরি যাবে না। এসব চিনিকল আখ কেনাও বন্ধ রাখবে না। ফলে কৃষকদের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না।
লোকসানের বোঝা কমাতে সম্প্রতি কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর (রংপুর), রংপুর ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। এসব চিনিকলে চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের আখমাড়াই বন্ধ করা হয়েছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন কৃষক ও চিনিকলের কর্মীরা।
করোনাকালে চাকরি হারালে কর্মসংস্থানের কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল প্রায় তিন হাজার কর্মী।
অন্যদিকে চিনিকলের আওতাভুক্ত এলাকায় জমিতে আখ চাষ করা কৃষকরা ছিল লোকসানের আশঙ্কায়। চিনিকল আখ না কিনলে ফসল কোথায় বিক্রি হবে, তা নিয়ে দুর্ভাবনা ছিল তাদের মধ্যে।
তবে সোমবার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় দুই পক্ষের দুশ্চিন্তা দূর হবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সংসদ সদস্যরা অংশ নেন।
চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: নিউজবাংলা
বৈঠক শেষে জানানো হয়, বন্ধ হয়ে যাওয়া চিনিকলে আখ মাড়াই না হলেও কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিককে ছাঁটাই করা হবে না। উৎপাদন বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকদের পার্শ্ববর্তী চিনিকলে বদলি করা হবে।
একই সঙ্গে উৎপাদন বন্ধ রাখা চিনিকলে আখ কিনে সেগুলো উৎপাদনে থাকা কলে পাঠিয়ে দেবে বিএসএফআইসি।
সিদ্ধান্ত হয় কেরু অ্যান্ড কোং, মোবারকগঞ্জ সুগার মিল, ফরিদপুর চিনিকল, রাজশাহী চিনিকল, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল, নাটোর সুগার মিল, ঠাকুরগাঁও সুগার মিল, জয়পুরহাট চিনিকল ও জিলবাংলা সুগার মিলে মাড়াই হবে আখ।
জানানো হয়, যে কলগুলোতে চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে, সেগুলো আধুনিকায়ন করে আবার চালু হবে। বহুমুখী খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে কারখানাগুলোকে লাভজনক করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
জাপান ও থাইল্যান্ড বাংলাদেশের চিনিকলে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায়। করোনার কারণে পুরো বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এ বিষয়ে অবশ্য বৈঠক শেষে কিছু জানানো হয়নি।
বিএসএফআইসি চিনিকল রয়েছে ১৫টি। এর সবগুলোতে উৎপাদন ব্যয় বাজার দরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এ কারণে গত পাঁচ বছরে সরকারের তিন হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। গত অর্থবছরেই লোকসান ছিল ৯৭০ কোটি টাকা।
এর বাইরে সাত হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড আখের মূল্য ও সরবরাহকারীর বিল বকেয়া আছে আরও ৫৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
বন্ধ করে দেয়া রংপুর চিনিকলে গত মৌসুমে প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৩১২ টাকা। এ ছাড়া পঞ্চগড় চিনিকলে ৩০২, কুষ্টিয়ায় ২৭৩, শ্যামপুরে ২৬২, সেতাবগঞ্জে ২৪৯ এবং পাবনায় প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৭৮ টাকা। এসব চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৪ টাকার কমে।