বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ, দূরদর্শী সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার’

  • মো. রকিবুর রহমান   
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:০০

কোভিড-১৯-এর কারণে বাজার যখন তলানিতে চলে যাচ্ছিল, তখন ১৯ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রত্যেক শেয়ারে একটি যৌক্তিক ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দিয়েছিল, যা ছিল একবারে ঐতিহাসিক। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীর শেয়ারের দাম একটি নির্দিষ্ট প্রাইসের নিচে ট্রেড হবে না। অনেকে আমরা ফ্লোর প্রাইস নিয়ে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু আজ প্রমাণ হয়, ওইটা ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, যা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সর্বনিম্ন দামে শেয়ার বিক্রি থেকে রক্ষা করেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন সময়ে বাস্তব সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে পজিটিভ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

জানুয়ারি ১৬, ২০২০ তারিখে পুঁজিবাজারে যখন লেনদেন তলানিতে চলে যাচ্ছিল, বিনিয়োগকারীরা যখন হতাশায় ভুগছিল, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আইসিবি যখন বিনিয়োগে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছিল, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের পলিসি মেকারদের সাথে একটি সভা করেন। উক্ত সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছয়টি short-term ও long-term measures পুঁজিবাজারে প্রয়োগ করার নির্দেশ প্রদান করেন। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো

- পুঁজিবাজারে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বাড়িয়ে সক্ষমতা বাড়ানো;

- মার্চেন্ট ব্যাংক ও ইনস্টিটিউশনদের জন্য সহজ ক্রেডিট সুবিধা;

- রাষ্ট্র ও মালিকানাধীন আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানো;

- স্টক মার্কেটে কনফিডেন্স আনার পদক্ষেপ নেয়া;

- ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া এবং

- আইপিওর মাধ্যমে ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানি, বহুজাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা।

ইতিমধ্যেই প্রত্যেক ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং যা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদে ডিভিডেন্ড দেয়ার ব্যাপারে যুগান্তকারী আইন পাস করেছে, অর্থাৎ কোম্পানির Retained Earnings থেকে একটি অংশ ডিভিডেন্ড অবশ্যই দিতে হবে এবং ডিভিডেন্ড হিসেবে ক্যাশ যা দেবে, তার ৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিতে পারবে।

গত ১০ বছর যদি আমরা দেখি প্রায় সকল কোম্পানি শুধু বোনাস শেয়ার দিতে উৎসাহিত ছিল। এতে করে স্পন্সর/ডিরেক্টর/প্রমোটাররা লাভবান হতো আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

কোভিড-১৯-এর কারণে বাজার যখন তলানিতে চলে যাচ্ছিল, তখন ১৯ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রত্যেক শেয়ারে একটি যৌক্তিক ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দিয়েছিল, যা ছিল একবারে ঐতিহাসিক। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীর শেয়ারের দাম একটি নির্দিষ্ট প্রাইসের নিচে ট্রেড হবে না।

অনেকে আমরা ফ্লোর প্রাইস নিয়ে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু আজ প্রমাণ হয়, ওইটা ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, যা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সর্বনিম্ন দামে শেয়ার বিক্রি থেকে রক্ষা করেছে।

কোভিড-১৯-এর কারণে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বর্তমান সরকার বাজেটে যে সুযোগ দিয়েছে, তা আরও ঐতিহাসিক এবং যুগান্তকারী। সুদের হার ছয়-নয় নির্ধারণ করা, কালো টাকা সাদা করার সহজ সুবিধা যা পুঁজিবাজারের তারল্যের জন্য অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছে, তাতে করে বাজারে টাকা ঢুকতে শুরু করেছে, যা পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করতে বড় ধরনের সহায়তা করছে।

বন্ড মার্কেটকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করার জন্য Up-Front এ ট্যাক্স কর্তনের প্রভিশনটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে লেনদেনের ওপর আরোপিত ট্যাক্স বিনিয়োগকারীর স্বার্থে বিলুপ্ত করা হয়েছে। জিরো কুপন বন্ডের আয়কে করমুক্ত করা হয়েছে। বন্ড মার্কেট নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু হয়েছে এবং খুব শিগগিরই এর সুফল দেশব্যাপী পেতে শুরু করবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রস্তাবিত টাকা ১০০০ কোটি মিউনিসিপ্যাল বন্ডের একটি বড় উদাহরণ।

বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং সরকার পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা/জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ব্যবস্থার সাথে জড়িত সকল লিস্টেড কোম্পানি, ব্রোকার, স্টক এক্সচেঞ্জ ডিলার, ইস্যুয়ার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অডিটর, অ্যাসেট ম্যানেজার, অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন কোম্পানিসহ সকলকে সঠিক আইন মেনে ব্যবসা করার স্বার্থে নির্দেশ প্রদান করেছে।

কোনো প্রকার অনিয়ম বা প্রতারণা করা চলবে না। যেমন: স্পন্সর/ডিরেক্টর/প্রমোটার সবাইকে (একক ও সম্মিলিতভাবে) ২% থেকে ৩০% শেয়ার ধারণ করতে হবে। পুঁজিবাজারের জন্য এটা খুব ভালো দিক যে, ইতিমধ্যেই ভালো মৌলভিত্তিক অনেক কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ২% থেকে ৩০% শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা পরিপালন করেছে।

আমি মনে করি যেসব কোম্পানি ২% থেকে ৩০% শেয়ার ধারণ প্রতিপালনের জন্য সময় চেয়েছে, তাদের তা প্রদান করা যেতে পারে। যারা এ বিষয়ে এখনও সম্পূর্ণ উদাসীন, তাদের পর্ষদ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা উচিত।

কোম্পানিগুলোতে ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর নিয়োগ দিতে হবে যারা নিজ স্বার্থের বাইরে শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা করবে। তারা স্পন্সর ডিরেক্টরদের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে।

সরকার পুঁজিবাজারে সুশাসনে প্রচণ্ড গুরুত্বারোপ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার Z-Category কোম্পানির মানদণ্ড ঢেলে সাজানো হয়েছে। কোম্পানির যারা নিয়মিত এজিএম করে না, ডিভিডেন্ড দেয় না, পুঞ্জীভূত লোকসান পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে বেশি ইত্যাদি।

Z-Category Settlement Period change করা হয়েছে। স্পন্সর/ডিরেক্টর/প্রমোটারদের Block Module এ রাখা হয়েছে। Dutch-Action Method চালু করা হয়েছে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির ক্ষেত্রে। লক-ইন পিরিয়ড শুরু হয় প্রথম লেনদেনের তারিখের ওপর ভিত্তি করে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজার নিয়ে ১০ বছর আগে তার দূরদর্শী বক্তব্যে বলেছিলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ আসবে পুঁজিবাজার থেকে। ব্যাংক শুধু দেবে স্টার্ট আপ/ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। এর জন্য ভালো ভালো সরকারি শেয়ার পর্যায়ক্রমে ক্যাপিটাল মার্কেটে ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। কিন্তু আমাদের যারা এটা বাস্তবায়ন করবেন, তারা সে সময় বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, মিনিস্ট্রি অব ফাইন্যান্স/ ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিনিস্ট্রি/ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জেসহ অন্যরা সে রকম কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি, যার ফলে ব্যাংক থেকে সব শিল্পপতি লোন নিতে পছন্দ করেন, কারণ সেখানে কোনো জবাবদিহিতা নাই।

এই কারণে বিগত ১০ বছরে ব্যাংক প্রদত্ত বিপুল পরিমাণ লোন, Non-Performing Loan-এ পরিণত হয়েছে, যা অর্থনীতিতে ঋণখেলাপির একটি কালচার তৈরি করেছে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিএসইসি গত ১০ বছরে অনেক আইন সংশোধন করেছে, রুলস তৈরি করেছে, আবার নিজেদের মতো আইন/রুলস বানিয়েছে যা পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো এক্সচেঞ্জে প্রযোজ্য নয়। পুঁজিবাজার চলবে কঠোর নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে। সুবিধামতো বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। ইনডেক্সকে নিয়ন্ত্রণ করাও ছিল একটি মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। বাজার চলবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহের মাধ্যমে। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে এই বাজারকে ভালো করার সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এর প্রয়োগও শুরু হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা কখন কোন শেয়ার কিনবে, কেন কিনবেন, কোন দামে কিনবেন, এসব তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিন্তু তারা চায় Circular Trade, Insider trade ও মার্কেট ম্যানিপুলেশন যাতে বন্ধ হয়, বিভিন্ন লিস্টেড সিকিউরিটিজের Earnings Per Share, Price Earnings Ratio, Net Asset Value, Companies Growth, Reserve, Business Expansion এর তথ্য যেন ঠিক থাকে।

সরকারের পলিসি হচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ পার্টিসিপেশন বাড়ানো। সেই জন্য ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ডিপোজিটের সুদের হার কম হওয়ায় বাজার যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে থাকে তাহলে অবশ্যই পুঁজিবাজার হবে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার টাকার প্রধান উৎস এবং ব্যাংক থেকে টাকা নেয়ার চাপও কমে যাবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিভিডেন্ড পলিসির কারণে সকলে এর সুফল পেতে শুরু করেছে। প্রতিটি ভালো লিস্টেড কোম্পানি ভালো ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়া শুরু করছে এবং এই বছরে কোভিড-১৯ সত্ত্বেও আমরা দেখতে পাচ্ছি বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ভালো মুনাফা করেছে। তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ৯ মাসের মুনাফা এর ভালো উদাহরণ।

আমার বক্তব্য হলো এখন আমরা যারা পুঁজিবাজারের সাথে জড়িত, যেমন: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ ব্যাংক, মিনিস্ট্রি অব ফাইন্যান্স, লিস্টেড কোম্পানি, ট্রেক হোল্ডার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সবাই যার যে দায়িত্ব আছে, তা যদি সঠিকভাবে পালন করি, তাহলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অনেক দূর যাবে এবং অর্থনীতিতে ভালো অবদান রাখবে।

আমরা যেন ইমোশন দিয়ে না চলি, আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন মেনে চলি, বাজারে যার যার অবস্থান থেকে সঠিক কাজগুলো করি। এখানে ব্যর্থতার সুযোগ নাই।

যার যার দায়িত্বের জবাব তাকেই দিতে হবে। তিনি যদি নেতৃত্বে থাকেন তাহলে ইমোশন থেকে বের হয়ে কাজ করতে হবে।

বন্ড মার্কেট, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এসএমই মার্কেট, এটিবি বোর্ডকে effective করতে হবে। নতুন নতুন প্রোডাক্ট যেমন Sukuk, ETF চালু করতে হবে। আমরা যেন একক সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ না করি, যে যেখানে দায়িত্বে আছি, নিয়ম মেনে কাজটা করি। কারও ব্যর্থতার দায় কেউ নেবে না। আমাদের সেটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। দিনের শেষে সবাইকে তার কাজের জবাবদিহিতা করতে হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সে যত প্রভাবশালী হোক।

আসুন আমরা যার যার অবস্থান থেকে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করি, সবাই মিলে বিনিয়োগকারীদের সঞ্চিত টাকার একটি অংশ পুঁজিবাজারে আনার পথ করে দেই, যাতে করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে; অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় এবং সর্বোপরি দেশ অনেক এগিয়ে যায়। অন্তত আগামী ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ইনশাআল্লাহ বাজার মূলধন জিডিপি অনুপাত বর্তমান ১৪ শতাংশ থেকে অন্তত ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়।

লেখক: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক

এ বিভাগের আরো খবর