করোনার মধ্যেও বড় ধরনের বিনিয়োগ আসছে সঞ্চয়পত্রে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সঞ্চয়পত্রসহ সব ধরনের জাতীয় সঞ্চয়স্কিমগুলোয় ৩৭ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন সঞ্চয়ীরা।
এই চার মাসে পুরোনো সঞ্চয়স্কিমগুলোর মধ্যে যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলোর মূল টাকা ও নিয়মিত মুনাফা বাবদ ২১ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার।
ফলে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সঞ্চয়স্কিম থেকে সরকারের নিট ঋণ হয় ১৫ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের নিট ঋণের প্রায় তিনগুণ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়স্কিম থেকে সরকারের নিট ঋণ ছিল ৫ হাজার ৫১২ কোটি টাকা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই এ খাতের লক্ষ্যমাত্রার ৭৮ শতাংশ ঋণ হয়েছে সরকারের। চলতি অর্থবছরের পুরো সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত এপ্রিল থেকে দেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এ লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো জানুয়ারির পর থেকেই আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে শুরু করে।
অন্যদিকে, বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ শতাংশের কাছাকাছি। এ কারণে বিনিয়োগের পদ্ধতি আগের থেকে কঠোর করার পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত পাঁচ-ছয় মাসে যেসব সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে সেগুলি নিশ্চয়ই আবার নতুন করে বিনিয়োগ হয়েছে সঞ্চয়পত্রে। তা ছাড়া আমানতের সুদহার কম হওয়ায় অনেকে মেয়াদী আমানত ভাঙিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় পুঁজিবাজারের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। এ কারণে নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য অনেকে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছে।’
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে সঞ্চয়পত্র অনলাইন পদ্ধতিতে আনা হয়। কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়। পাঁচ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর বসানো হয়। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগসীমা ৫০ লাখ টাকা করা হয়। অবশ্য পেনশনার সঞ্চয়স্কিম এসব কড়াকড়ির বাইরে রাখা হয়।
ফলে ওই অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ আসে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) নিট ঋণ এসেছিল ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটায় সরকার। চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ করে মেটাবে সরকার। যার ৮০ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ করে এবং ২৫ হাজার কোটি টাকা আসবে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে (সঞ্চয়পত্রে ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য উৎস থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা) ঋণ নিয়ে ঘাটতি মেটাবে সরকার।
ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ বাড়রেও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ অনেক কম এবার। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়ায় ৯৪৫ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ ছিল ৩৫ হাজার ১৩ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এবার নিট ব্যাংক ঋণ কমেছে ৯৭ শতাংশেরও বেশি।