দুইটা শেয়ার মাত্র সাত দিনে ডাবল হবে, যাদের লাগবে ইয়েস লিখে ইনবক্স করুন। বড় পুঁজির বিনিয়োগকারীরা আবারও সাড়া দিন, ১০০% শিওর....। আগামীকাল থেকে কেয়া (কেয়া কসমেটিক্স) চোখ বন্ধ করে বাই করা শুরু করব, দোয়া করবেন।
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ কিংবা পেইজে এমন চটকদার পোস্ট দিয়ে শেয়ার কিনতে প্রলোভন দেখানো হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। আর এ ফাঁদে পা দিয়ে পুঁজি হারাচ্ছেন অনেকেই। যদিও নিয়মানুযায়ী কাউকে শেয়ার কিনতে প্রলুব্ধ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এর আগে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থামাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়।
বছর পাঁচেক আগে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের সাবেক কর্মকর্তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন পুঁজিবাজারবিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় গত সেপ্টেম্বরে ফের সতর্কতামূলক আদেশ জারি করে বিএসইসি। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসই-এর নাম বা লোগো ব্যবহার করে কোনো তথ্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ না করার আহ্বান জানানো হয়।
সে সঙ্গে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য বা অন্য কোনো বিষয়ে পূর্বানুমান বা বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে এমন মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। বলা হয়, এর ব্যত্যয় ঘটলে সিকিউরিটিজ আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।
পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে একটি ব্রোকারেজ হাউজে
এবার সেই পথেই হাঁটছে বিএসইসি। বুধবার শেয়ার বাজারে সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ নামে একটি গ্রু বন্ধে টেলিযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা ৩২ হাজারের বেশি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমন ৩৫টিরও বেশি ফেসবুক গ্রুপ ও ৩০টির মতো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব গ্রুপে সদস্য রযেছে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার থেকে সর্বনিম্ন দুই হাজারে মতো। এর বাইরেও আরও গ্রুপ থাকতে পারে।
এসব গ্রুপ থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি সম্পর্কে নানা খবর ও কেনাবেচার পরামর্শ দেয়া হয়। চলে তথ্য কেনাবেচাও। গ্রুপগুলোতে টার্গেট কোম্পানিকে বলা হয় ‘হট আইটেম’।
বিএসইসির আদেশের পরও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে এসব গ্রুপে। ‘ডিএসই ক্লাব বিডি’ নামে গ্রুপে ব্যবহার করেছে ডিএসইর লোগে। ডিএসই ও সিএসই ইনভেস্টর ক্লাব (ডিসিআইসি) নামেও একটি গ্রুপ রয়েছে, যার সদস্য সংখ্যা ৪০ হাজার ছুঁইছুঁই।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব গ্রুপ পুঁজিবাজারের নিয়মভঙ্গ করে প্রচারণা চালাবে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে আমরা বিটিআরসিকে একটি গ্রুপ বন্ধ করতে চিঠি দিয়েছি।’
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিটিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘এসব চক্রের বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। এর বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইর লোগো ব্যবহার করে বিনিয়োগাকরীদের বিভ্রান্ত করছে। এদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
এসব গ্রুপের সদস্যদের কেউ কেউ নিজেদের শেয়ার বাজার অ্যানালিস্ট বা বিশ্লেষক হিসেবে পরিচয় দেয়। কিন্তু সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, বিএসইসির সনদ ছাড়া কেউ নিজেকে বাজার বিশ্লেষক দাবি করতে পারবে না। আইনে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের শাস্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।