করোনা মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ চিহ্নিত করতে সমস্যার গভীরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘কর্মসৃজন ও গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবন’ শীর্ষক সেমিনারের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ পরামর্শ দেন।’
এসময় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না আসা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয় দেশের আর্থিকখাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। আর্থিক খাত সংক্রান্ত আইনের বিধিবিধান কঠোরভাবে প্রয়োগ করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। উভয় প্রতিষ্ঠানই প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে জোরালোভাবে কাজ করছে। বিভিন্নভাবে ব্যাংকগুলোকে চাপও দিচ্ছে। এরপরও প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি আসছে না কেন?’
এর কারণ খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে কাজ করার অনুরোধ করেন মন্ত্রী।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আবারও প্রণোদনা ঘোষণা করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে সরকার এখনও কোনো পরিকল্পনা নেয়নি।
করোনার প্রথম ধাক্কার সময় অর্থনীতির ক্ষতি এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজে ভর করেই দেশের অর্থনীতি গতি ফিরে পেয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
মন্ত্রী জানান, আগের প্রণোদনা প্যাকেজ শতভাগ বাস্তবায়নকেই গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
সেমিনারে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মানমোহন প্রকাশ বলেন, ‘করোনা সময়ে স্বাস্থ্যখাত এখন বিশ্বের সব দেশের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। সরকারের ব্যয়ের বড় একটা অংশ এখানে বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ, জনগণের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা না থাকলে অর্থনীতি টেকসই হবে না।’
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনাকালে প্রণোদনা সরকারের কার্যকর ওষুধ ছিল। এটি প্রশংসনীয়, তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে এর নজরদারিতে আরও আন্তরিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
এক্ষেত্রে গ্রামীণ পর্যায়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরও বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
অর্থবিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘করোনায় স্বাস্থ্য খাত ও অর্থনীতি দুইয়েরই ক্ষতি হয়েছে। স্বাস্থ্যের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিদিনই নিরূপন করা হচ্ছে। তবে অর্থনীতির সার্বিক ক্ষতি এখনও নির্ণয় করা যায়নি। এটি জানতে আরও সময় লাগবে।’
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলম বলেন, ‘করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের দুটি উদ্যোগ প্রশংসনীয়। প্রথমটি হল, অর্থনীতিকে পুরোপুরি বন্ধ না করা এবং দ্বিতীয়টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা। এসব উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও স্থিতিশীল।’
ভবিষ্যতে অর্থনীতি সুরক্ষায় এখন থেকেই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি।