স্রোতের বিপরীতে খেলাপি ঋণের হিসাবে উল্টো চিত্র দেখল দেশের ব্যাংকিং খাত। করোনায় ঋণগ্রহিতাদের বিশেষ ছাড় দেয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় এবার বাড়েনি খেলাপি ঋণ। উল্টো জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমেছে ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সে সময় ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা।
গত জুনে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।
করোনায় অর্থনীতির ক্ষতি বিবেচনায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কাউকে খেলাপি না করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময়ে কোনো ঋণগ্রহিতা নিয়মিত কিস্তি না দিলেও ব্যাংকগুলো তাকে খেলাপি করতে পারবে না। প্রথমে এই ছাড় ছিল জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফায় সেপ্টেম্বর ও তৃতীয় দফায় ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত বছরের শেষ দিকে সহজ শর্তে খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ পেয়ে অনেকেই মাত্র দুই শতাংশ নগদ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করিয়ে নেয়।
এ সুবিধার আওতায় ২২ হাজার কোটি টাকার মতো খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয় বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, গত মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। জুনে তা কিছুটা বেড়ে ৯৬ হাজার কোটি টাকা হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট-বিআইবিএমের এক সমীক্ষায় বলা হয়, খেলাপি ঋণের মধ্যে একেবারে শেষে ধাপ ‘মন্দ ঋণ’। ২০১৯ সালে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ ছিল ৮৬ শতাংশেরও বেশি। এ ধরনের ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা কম থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জুনে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ ছিল ভিন্ন। ঋণ পুনঃতফসিলের অনুমোদন নিয়ে অনেক ব্যাংক শেষ পর্যন্ত তা করতে পারেনি। ফলে করোনার মধ্যে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল।’
এবার খেলাপি ঋণ কমেছে। কারণ নতুন করে খেলাপি হচ্ছে না। আবার অনেকে পুরোনো ঋণ পরিশোধ করছেন, পুনঃতফসিলও করছেন, জানান বাংলাদেশে ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আগামীতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে খেলাপি ঋণ আবার বাড়বে। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যাতে টিকে থাকতে পারে, সে লক্ষেই ছাড় দেয়া হয়। নির্দেশনা প্রত্যাহারের পর যাতে একবারে খেলাপি ঋণ না বাড়ে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবেচনায় রয়েছে।
তবে এ ছাড়কে সাধুবাদ জানিয়েছন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি শামস মাহামুদ বলেন, করোনাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ছাড় ব্যবসায়ীদের বাড়তি চাপ কমিয়েছে। দেরিতে হলেও টাকা ফেরত পেলে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে ব্যাংকগুলো।