চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দিয়েছে সরকার, তাতে এখন পর্যন্ত খুব একটা সাড়া মেলেনি।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৩৫৮ জন ঘোষণা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। এ থেকে সরকার কর পেয়েছে ৩৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। তবে এরা কারা তাদের নাম প্রকাশ করেনি এনবিআর।
এনবিআরের কর্মকর্তরা বলেছেন, রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর ফলে এ তালিকা আরও দীর্ঘ হবে।
কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত তালিকায় রাঘব বোয়ালদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেউ নেই। বেশির ভাগই সাধারণ করদাতা। কিছু আছে পেশাজীবী। তবে শেষ সময়ে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালীরা এই সুযোগ নিতে পারেন।
নিয়ম অনুযায়ী, ১০ শতাংশ কর দিয়ে যে কেউ রিটার্নে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দিতে পারেন। তার আয়ের উৎস জানতে চাইবে না এনবিআর।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে সরকার। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মোটামুটি সাড়া পাওয়া গেলেও এরপর থেকে কোনোবারই তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।
দেশে-দেশের বাইরে ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েক বছর ধরে টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ রাখে সরকার। তবে গত বাজেটে অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়।
সম্প্রতি দেশ থেকে প্রতিবছর বিপলু পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। সরকার মনে করছে, টাকা সাদা করার সুযোগ দিলে দেশ থেকে টাকা পাচার কমবে।
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছর ২০২০-২১ বাজেটে উম্মুক্তভাবে টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়।
এবারের বাজেটে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকাসহ সাত-আটটি খাতে কালে টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। কেউ এসব খাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে যে কোনো অঙ্কের টাকা সাদা করতে পারবেন। এনবিআর বা দুদকসহ অন্য কোনো সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা তার আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না।
আগের দেয়া সুযোগের সঙ্গে এবারের পাথর্ক্য হচ্ছে, আগে আয়ের উৎস নিয়ে এনবিআর প্রশ্ন করত না। দুদক কিংবা অন্য কোনো গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল। কিন্তু এবার যে সুযোগ দেয়া হয়, তাতে কেউই প্রশ্ন করবে না। অর্থাৎ সুযোগটি অবারিত করা হয়েছে।
এবারেরর কালো টাকা সাদা করার প্রসঙ্গে সরকার বলেছে, করোনাকালে বিনিয়োগ বাড়াতে এ সুযোগ অবারিত করা হল। তা ছাড়া এ সুযোগ নেয়া হলে দেশ থেকে টাকা পাচার কমবে এবং এই টাকা অর্থনীতির মূল স্রোতে আসবে।
বাস্তবতা হচ্ছে এত সুযোগ দেয়ার পরও তেমন সাড়া মিলছে না।
অর্থনীতিবিদেরা বার বার বলে আসছেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া ঠিক না। কারণ এতে করে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন। কিন্তু তাদের মত উপেক্ষা করে বার বার এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে।