অর্থনৈতিক তাৎপর্য বিবেচনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে কানাডা সরকার সব সময়ই অগ্রাধিকার দেয় বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাই কমিশনার বেনোইট প্রিফনটেইন। তার মতে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশও এটা অনুসরণ করতে পারে।
শনিবার ‘এক্সপোর্ট লঞ্চপ্যাড বাংলাদেশ’ শীর্ষক ট্রেড প্রফেশনালদের সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এসএমই খাত নিয়ে নিজ দেশের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বেনোইট।
তিনি জানান, কানাডার ৯০ শতাংশ মানুষ এসএমইখাত নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশও এটা অনুসরণ করতে পারে। এ জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরির কোনো বিকল্প নেই।
রাজধানীর হোটেল আমারিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে দেশের নয়টি শিল্প, ব্যাংক, ট্রেড, চেম্বার ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে মোট ২৯ জন বাংলাদেশি ট্রেড প্রফেশনালকে বাণিজ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে সহায়তার স্বীকৃতি হিসেবে সনদপত্র দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে কানাডা-বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা তুলে ধরেন হাইকমিশনার বেনোইট প্রিফনটেইন। জানান, কানাডার অনেক বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করছে। বাংলাদেশ থেকে রফতানি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
‘এখানকার উদ্যোক্তারা এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। বড় কোম্পানিরগুলোর পাশাপাশি এসএমই খাতের উদ্যাক্তারাও কৃষি খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কানাডা সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, বাংলাদেশ সরকারও এসএমই খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এসএমই খাতের গুরুত্ব নিয়ে রূপরেখা প্রণয়ন করেছে সরকার।
‘এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে চলমান অর্থনীতির যে ভিত্তি তার নেপথ্যে এসএমই খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এসএমই পণ্য শুধু দেশেই নয়, চাহিদা মেটানোর পর আমরা এখন রফতানিও করছি।’
মন্ত্রীর দাবি, করোনার ধাক্কায় দেশের অন্যান্য খাতের মতো এসএমই খাত কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। বেড়েছে উৎপাদন ও সেবার প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা। সেখানে এগিয়ে রয়েছেন নারীরা।
টিপু মুনশি বলেন, বর্তমানে কানাডায় এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হচ্ছে। আমরা এসএমই পণ্য রফতানি বাড়িয়ে এই আয় আরও বাড়াতে চাই। এসএমই পণ্যের রফতানি বাড়লে খাতটিও টেকসই হবে।
কানাডায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বাড়ানোর আগ্রহের কথা জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ‘কানাডা অনেক বড় বাজার। আমরা সব ধরনের পণ্য রফতানি করে কানাডার বাজারটাকে ধরতে চাই। আগামী তিন বছরে দেশটির সঙ্গে চলমান রফতানি আয় দ্বিগুণ করতে চাই।
‘সম্প্রতি সেখানকার একটি প্রদেশে পলিথিনের ব্যবহার সেখানে নিষিদ্ধ করেছে। বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে আমাদের সেখানে পাটজাত পণ্যের রফতানি বাড়ানোর সুযোগ বেড়েছে। এ সুযোগটা কাজে লাগাতে চাই।’
কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমান ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বাণিজ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাস্তবমূখী প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের পরিচালক হানি সালেম সম্বল, টিএফও কানাডার নির্বাহী পরিচালক স্টিভ টিপম্যান, অতিরিক্ত বাণিজ্য সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ও নারী উদ্যোক্তা ইশরাত জাহান চৌধুরী প্রমুখ।
সনদদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই), বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি), ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই), এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি), এসএমই ফাউন্ডেশন (এসএমইএফ), ওমেন এন্ট্রারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডব্লিওইএবি) এবং ওমেন এন্টারপ্রেনার নেটওয়ার্ক ফর ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিওইএনডি)।