করোনার কারণে এ বছর প্রত্যাশিত হারে আয়কর রিটার্ন জমা পড়ছে না। অতীতে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তে রিটার্ন দাখিলের হিড়িক পড়ে।
এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে।
করোনায় রিটার্ন জমার সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিচলিত এনবিআর কর্মকর্তারা। তাই সময় বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। শেষ মুহূর্তে সময় বাড়ানোর ঘোষণা আসতেও পারে।
আগামী ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ সময়। করদাতাদের হাতে আছে চার দিন। এর মধ্যে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি।
কার্যত করদাতারা সময় পাচ্ছেন মাত্র দুই দিন। ফলে যারা এখনও রিটার্ন জমা দেননি, দেরি না করে চলে যান কর অফিসে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআর বলেছে, করদাতাদের সার্বক্ষণিক সেবা দিতে সারাদেশে কর অফিসগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা খোলা রয়েছে।
সেবা দিতে মেলার আদলে প্রত্যেক কর অফিসের সামনে আলদা বুথ খোলা হয়েছে। এসব বুথ থেকে ফরম পূরণ, ই-টিআইএন নেয়াসহ সব ধরনের সেবা মিলছে।
শেষদিন সোমবার রাত আটটা পর্যন্ত এ সেবা চলবে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
যে কারণে আগ্রহে ভাটা পড়েছে
করোনার কারণে আগের চেয়ে রিটার্নের সংখ্যা এবার এক-তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেন কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিভিন্ন কর অফিস ঘুরে দেখা গেছে, করোনার মধ্যে অনেকেই তাদের রিটার্ন জমা দিতে ভিড় জমিয়েছেন।
মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এসেছেন তারা। কর অফিসগুলোর পক্ষ থেকে হ্যান্ড সেনিটাইজার দেয়া হয় করদাতাদের।
আবুল হাকিম মীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। গত দশ বছর ধরে কর দিচ্ছেন তিনি। রাজধানীর কর অঞ্চল-৪ এর একজন করদাতা তিনি।
রাজধানী আজিমপুরের বাসিন্দা আবুল হাকিম মীর করোনার মধ্যেও বৃহস্পতিবার দুপুরে তার নিজের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে আসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, দায়িত্ব থেকেই এখানে এসেছেন। কর দেয়া নৈতিক দায়িত্ব। তাই প্রত্যেক সামর্থ্যবান নাগরিককে কর দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
নিয়ম অনুযায়ী, আয় থাকুক না থাকুক প্রত্যেক টিআইএনধারীকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হয়। তা না হলে জরিমানা গুণতে হয়। জরিমানার পরিমাণ এককালীন এক হাজার টাকা এবং যতো দিন পরিশোধ করা হবে না, প্রতিদিনের জন্য আরও ৫০ টাকা দিতে হয়।
তবে কেউ যদি যথাসময়ে রিটার্ন না দিতে পারেন, সময় বাড়ানোর আবদনের সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে আর জরিমানা গুণতে হবে না।
করোনার প্রভাবে রিটার্ন জমায় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, পরিসংখ্যান তা বলে দেয়।
সেগুনবাগিচায় কর অঞ্চল-১০ এর আওতায় মোট করদাতার সংখ্যা এক লাখ ৪২ হাজার। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ২৬ হাজার রিটার্ন জমা পড়েছে। অর্থাৎ ওই দিন পর্যন্ত উল্লিখিত কর অঞ্চলের মোট করদাতার মাত্র ১৮ শতাংশ রিটার্ন জমা দেন। গত বছর এই সময়ে তিন গুণেরও বেশি জমা পড়েছিল।
কর অঞ্চল-১০ এর কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, করোনার কারণে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা কমে গেছে। তবে শেষ সময়ে চাপ কিছুটা বাড়ছে বলে জানান তিনি।
কাকারাইলের আয়শা মঞ্জিলসংলগ্ন কর অঞ্চল-৩ এর মোট ২ লাখ ২৪ হাজার করদাতার মধ্যে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমা পড়েছে ৫২ হাজার ৩০০ জনের।
এই অফিসের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, এবার রিটার্ন দাখিলের চিত্র হতাশাজনক।
গত বছর ২২ লাখ লোক রিটার্ন জমা দেন। গতবার আয়কর মেলায় ভালো সাড়া মিলেছে, যে কারণে রিটার্নের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল বলে জানান এনবিআরের কর্মকর্তরা।
সময় বাড়তে পারে
আগে আদেশ জারি করে দফায় দফায় সময় বাড়াতে পারত এনবিআর। কিন্তু দুই বছর আগে জাতীয় বাজেটে ৩০ নভেম্বর সময় 'নির্দিষ্ট' করে দেয়ার পর থেকে তা বাড়াতে পারছে না এনবিআর।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেছেন, সময় বাড়াতে হলে আইন সংশোধন করে তা জাতীয় সংসেদ পাস করতে হবে। তারপরই সময় বাড়ানো যাবে।
তবে এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহামারিসহ অন্য কোনো বিশেষ কারণে দেশে যখন সংকট দেখা দেয়, নিবার্হী আদেশ জারি করে আইন পরিবর্তন করা যায়।
এ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এনবিআরকে। বিশেষ ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যেম রিটার্ন জমার সময় এক মাস বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলেছ। আগামী সোমবার শেষ মূহূর্তে সময় বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।