বিশ্ববাজারে সোনার দামে লাগাম টানা হয়েছে। বেশ কিছুদিন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার পর সম্প্রতি ফের কমতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম।
মূলত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা সোনার দরপতনে ভূমিকা রেখেছে। তবে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও তার প্রভাব নেই দেশের বাজারে।
স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে সোনার দাম কমানোর বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হওয়ার পর থেকে কমছে দাম।
নির্বাচনের আগে ৩১ অক্টোবর প্রতি আউন্স সোনার মূল্য ছিল এক হাজার ৯৫১ ডলার। বর্তমানে তা কমে হয়েছে এক হাজার ৮৬০ ডলারে। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি আউন্সে দাম কমেছে ৯১ ডলার। সেপ্টেম্বরে প্রতি আউন্স সর্বোচ্চ প্রায় দুই হাজার ডলার পর্যন্ত ওঠে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জামার্নভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বায়ো-এনটেক তাদের উৎপাদিত টিকা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৯০ শতাংশ কার্যকর দাবি করে। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কোম্পানি মডার্নাও একই ঘোষণা দিলে অস্থিরতা কমে সোনার বাজারে।
স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা কার্যকারিতার ঘোষণা দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদে স্বস্তি বয়ে এনেছে। এ ছাড়া জো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ায় চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধেরও অবসান ঘটবে বলে আশা বিশ্ববাসীর। এসব কারণে সোনার দাম কমছে।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে সুবাতাসের আভাস মিলেছে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বক্তব্যে। গত বৃহস্পতিবার এশিয়া-প্যাসিফিক ইকনোমিক কো অপারেশনের (এপেক) বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
স্বর্ণের দামের বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) সাবেক সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুল্ক বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে চীনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন ডনাল্ড ট্রাম্প, যে কারণে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জো বাইডেন জয়ী হওয়ার পর অনেকেই ধারণা করেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। এতে স্থিতিশীলতা ফিরবে স্বর্ণের বাজারে।’
বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, ‘বিশ্ববাজারে সোনার দাম আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই স্থানীয় বাজারে দাম সমন্বয় করা হবে।’
স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, এ খাতে বিনিয়োগে লোকসানের ঝুঁকি কম। তাই বিশ্বে রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক অস্থিরতা দিখা দিলে বড় বড় ব্যবসায়ীরা মুদ্রা ও শেয়ার বাজারের বদলে স্বর্ণে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী হন। এ সময় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এবং করোনা প্রতিরোধে কার্যকর টিকা উদ্ভাবনের ঘোষণার পর পরিস্থিতি পাল্টানোর আভাস মিলেছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে দেশে সোনার সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ নিয়ে গঙ্গাচরণ মালাকার বলেন, ব্যাগেজ রুলের আওতায় প্রবাসীরা বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে সাড়ে আট ভরি স্বর্ণালঙ্কার আনতে পারেন। করোনাকালে তা বন্ধ রয়েছে।
দুবাই ও ভারত থেকে প্রচুর স্বর্ণালঙ্কার আসত। বর্তমানে দুবাইয়ে ভ্রমণ ভিসা বন্ধ। ভারত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আংশিক তুলে নিলেও সোনার গয়না আসছে না। ফলে সোনার সরবরাহে ঘাটতি থেকেই গেছে।
বৈধ পথে সোনা আমদানি উৎসাহিত করতে গত বছর একটি নীতিমালা করে সরকার। এতে ডিলারদের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সোনা আমদানির অনুমতি দেয়া হয়।
গত মাসে ওই নীতিমালা সংশোধন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, সোনার বারের পাশাপাশি গয়নাও আমদানি করতে পারবেন অনুমোদিত ডিলাররা। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ওই নীতিমালা কার্যকর নয়। ফলে বৈধ পথে সোনা তেমন আসছে না।
বিশ্ববাজারে দরে অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় বাজারে গত এক বছরে সাত দফা সোনার দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সবশেষ বাড়ানো হয় গত ১৫ অক্টোবর।
বর্তমানে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনা ৭৬ হাজার ৩৪১ টাকা। ২১ ক্যারেট প্রতি ভরির দাম ৭৩ হাজার ১৯১ টাকা। আর ১৮ ক্যারেট প্রতি ভরির দাম ৬৪ হাজার ৪৪৩ টাকা।