এখন নভেম্বর মাস। এ মাস আসলেই আয়কর মেলার কথা মনে পড়ে। পেশাজীবী, চাকরিজীবী,তরুণ উদ্যোক্তাসহ সবার কাছে এই মেলা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এর অন্যতম কারণ, ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই কম সময় ও সহজে রিটার্ন জমা দেয়াসহ সব ধরনের সেবা মিলে কর মেলা থেকে।
কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। করোনার কারণে চলতি বছর আয়কর মেলার আয়োজন স্থগিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। ফলে কর অফিসে গিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে করদাতাদের। কিন্ত তাদের মনে ভয়-ভীতি কাজ করেছ এই ভেবে যে,হয়রানির শিকার হতে হয় কি না।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেছেন, কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না। নিবির্ঘ্নে রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য করদাতাদের আহ্ববান জানান তিনি।
বুয়েট থেকে পাস করে দুই বছর আগে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি পান আবেদ রহমান। বর্তমানে তিনি যে বেতন পান, তাতে করের আওতায় চলে এসেছেন তরুণ প্রকৌশলী আবেদ। তিনি আয়কর দিতে চান।
আগামী ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন জমার শেষ সময়। এই সময়ের মধ্যে অবশ্যই রিটার্ন জমা দিতে হবে তাকে। কিন্তু কীভাবে দেবেন তা নিয়ে চিন্তিত আবেদ।
এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই আবেদের। আয়কর রিটার্ন জমার নিয়ম কানুন খুব সহজ করেছে এনবিআর। তিনি চাইলে নিজেই তার রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
আয়কর রিটার্ন হল করদাতার আয়-ব্যয়ের হিসাব। একজন করদাতা বছরে যে পরিমাণ আয় করেন, তা নিজে ঘোষণা করে নির্ধারিত ফরমে পূরণ করে জমা দেবেন।
তিনি বেতন হিসেবে কত টাকা আয় করেছেন, চাকরি ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে আয় আছে কি না,এসবসহ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য ও করদাতা শণাক্তকরণ নম্বার বা টিআইএন ফরমে লিখতে হয়।
বর্তমান আইন অনুযায়ী, যার করযাগ্য আয় আছে তাকে অবশ্যই রিটার্ন জমা দিতে হয়। সময়মত রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা গুণতে হয়।
এখন একজন ব্যক্তি বছরে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করলে তাকে কর দিতে হবে না। এর বেশি আয় থাকলেই নির্ধারিত হারে সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়।
বর্তমানে মাত্র এক পৃষ্ঠার ফরম পূরণ করে রিটার্ন জমা দেয়া যায়, যা আগে ছিল আট পৃষ্ঠার। ফলে তরুণ প্রকৌশলী আবেদ রহমানের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।
‘আইটি জিএইচএ’ নামে এই ফরমে মাত্র ১৩ ধরনের তথ্য দিতে হবে তাকে।
নাম, টিআইএন নম্বর, তিনি যে কর অঞ্চলের করদাতা সেই অঞ্চলের নাম, করবর্ষ (অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার), বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা,আয়ের পরিমাণ,অন্যান্য সম্পদ যদি থাকে তার তথ্য, আয়ের উৎস, করের পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
সঙ্গে এক কপি পাসপোর্ট ছবি স্টাপলার বা আঠা দিয়ে ফরমের সঙ্গে গেঁথে দিতে হবে।
আবেদ রহমান এই ফরম পূরণ করার পর হিসাব করবেন তার কত টাকা কর আসে। পরে যে কোনো ব্যাংক শাখায় গিয়ে চালানের মাধ্যেম করের টাকা জমা দিতে হবে। ওই চালানের এক কপি আয়কর ফরমে যুক্ত করে তা সংশ্লিষ্ট কর অফিসে জমা দিতে হবে।
কর কর্মকর্তা ফরমটি গ্রহণ করার পর আবেদ রহমানকে একটি স্বীকৃতিপত্র দেবেন। আলোচ্য বছরে সরকারকে কত টাকা কর পরিশোধ করেছেন তা লেখা থাকবে এতে।
আইনে দেই শ্রেণির করদাতা রয়েছে। ব্যক্তিশ্রেণি ও কোম্পানি করদাতা। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। আর কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান হলে ডিসেম্বর থেকে পরের ছয় মাসের মধ্যে জমা দেয়ার সুযোগ আছে।