কর ও ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া সহজতর করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী বছর থেকে অনলাইনেই আয়কর ও ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করা যাবে।
এনবিআর বলছে, কর-ভ্যাট হার নির্ধারণে দীর্ঘমেয়াদি একটি পদ্ধতি ঠিক করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব এ প্রক্রিয়াও চালু হবে।
‘অর্থ আইন ২০২০ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২’ শীর্ষক এক অনলাইন কর্মশালায় শনিবার এনবিআরের এ অবস্থান পরিষ্কার করা হয়। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কর্মশালাটির আয়োজন করে।
এনবিআর কর আদায় প্রক্রিয়া অটোমেশন করলেও এর আওতায় এখন অনলাইনে শুধু ভ্যাট এবং আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া যায়। ট্যাক্স পরিশোধ করতে হলে ব্যাংকে লাইনে গিয়ে টাকা জমা দিতে হয় করদাতাদের। ফলে অটোমেশনের পুরোপুরি সুফল পাচ্ছেন না তারা।
কর্মশালায় এনবিআর সদস্য (আয়কর নীতি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘করদাতাদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিতে সরকার কর কাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী বছর অনলাইনে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদান প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব হবে।’
কর-ভ্যাটের হার নির্ধারণে দীর্ঘমেয়াদি একটি পদ্ধতি নির্ধারণে এনবিআর কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে,যার মাধ্যমে অনলাইনে রিটার্ন জমার পাশাপাশি ঘরে বসে কর এবং ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করা যাবে। এতে হয়রানি কমার পাশাপাশি সময় সাশ্রয় হবে।
কর্মশালায় এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক বলেন, ‘ভ্যাট রিফান্ড প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হচ্ছে, তবে এ প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সবখাতেই ভ্যাটে ভোগান্তি দূর হবে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে (আরজেএসসি) বর্তমানে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা এক লাখ ৭৬ হাজার। এর মধ্যে টিআইএনধারী কোম্পানির সংখ্যা ৭০-৭৫ হাজার। এদের মধ্যে মাত্র ৩৬ হাজার কোম্পানি প্রতিবছর নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করছে। অর্থাৎ কর প্রদানে সক্ষম বড় অংশ এখনও করের আওতা বহির্ভূত।
চলতি বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এ লক্ষ্যমাত্রা ৯.৮২ শতাংশ বেশি। কিন্তু বেশির ভাগ লোক কর কাঠামোর বাইরে থাকায় মুষ্ঠিমেয় করদাতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকেই এই করভার বহন করতে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশকে উন্নত অর্থনীতির মর্যাদায় নিয়ে যেতে হলে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর বিকল্প নেই। কিন্তু সেটি হতে হবে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। এজন্য করের আওতা বৃদ্ধি, ট্যাক্স ও ভ্যাট রিটার্ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইন করা এবং রিফান্ড পদ্ধতি সহজ করা দরকার।’
ক্ষেত্র বিশেষে করছাড়ের সংস্কৃতি বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে শামস মাহমুদ বলেন, ‘শিল্পখাতের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে স্থাপিত নিবন্ধিত কারখানাকে লিজ রেন্টের উপর মূসক অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন।’
স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদেরও বাজারে প্রবেশের সুযোগ দিতে কাঁচামাল আমদানিতে আগাম কর কমানোর আহ্বান জানান তিনি।
কর্মশালায় ঢাকা চেম্বারের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।