মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের মাশুল প্রতি হাজারে ১০ টাকার নিচে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন।
সম্প্রতি ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ সেবা মাশুল কমিয়ে চোখ খুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
এ খাতের সেবার ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৫ শতাংশে নির্ধারণ ও একটি মোবাইল ব্যাংকিং এর এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর ফি ফ্রি করারও দাবিও জানানো হয়েছে।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে এক আলোচনায় বক্তারা এ দাবি জানান।
আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রয় মিত্র। তিনি বলেন, ‘নগদ সার্ভিস চার্জ কমিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। সার্ভিস চার্জ যে কমানো সম্ভব এতদিন বোঝা যায়নি। নগদ যেহেতু সার্ভিস চার্জ কমাতে সক্ষম হয়েছে তার মানে অন্যরাও চাইলে কমাতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ করা উচিত বলেও মনে করেন এই কর্মকর্তা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ-আউট রেট শুরু থেকে হাজারে সাড়ে ১৮ টাকা করা হলেও ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ সম্প্রতি সেটি ১০ টাকার নিচে নামিয়ে এনেছে। অন্য অপারেটরগুলো নিজেদের মধ্যে প্রতিটি লেনদেনে পাঁচ টাকা করে চার্জ করলেও ‘নগদ’ সেটি ফ্রি করে দিয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নগদের চিফ সেলস অফিসার শেখ আমিনুর রহমান বলেন, ‘নগদ সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে লাভের কথা চিন্তা না করে জনগণের সাধ্য ও সামর্থ্যের কথা চিন্তা করে সার্ভিস চার্জ কমিয়েছে। আশা রাখি আগামীতে নগদ আরও জনবান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’
বিটিআরসির সার্ভিস বিভাগের পরিচালক আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘এমএফএস প্রতিষ্ঠান রিটেইলার ও ডিস্ট্রিবিউটর কর্তৃক গৃহীত চার্জের সঠিক কস্ট মডেলিং প্রয়োজন। ১.৮৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জের বাকি ০.০১৫ টাকার কখনো কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। এ হিসাবে অনৈতিকভাবে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে।’
মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো যে সেবা মাশুল নেয় তা অযৌক্তিক উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘সবার মতামতের ভিত্তিতে ন্যায়সঙ্গত চার্জ নির্ধারণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে বলে আমি আশা করি।’
মূল বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বাণিজ্যিক ব্যাংকে লেনদেনের হয়রানি, দীর্ঘ সময় ব্যয়, যাতায়াতের ঝামেলা মুক্ত করলেও এ সেবা খাতের অযৌক্তিক সার্ভিস চার্জ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি গ্রাহকদেরকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।’
‘অবশেষে ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ সার্ভিস চার্জ কমিয়ে এনেছে। এতে করে গ্রাহকরা মনোপলির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে বলে আমরা মনে করি।’
সার্ভিস চার্জের রাজস্ব যেভাবে হয়ে থাকে
মোবাইল ব্যাংকিয়ে কোনো গ্রাহক যখন একবার টাকা ক্যাশ-ইন করে তখন প্রতি হাজারে এজেন্ট বা রিটেলার কমিশন পান ৪.১০ টাকা, আর ডিলার কমিশন পান ১.৪০ টাকা। আবার যখন ক্যাশ-আউট করে তখনও এই একই খরচ হয়। এসএমএস চার্জ বাবদ মোবাইল অপারেটর পায় ০.০৬৪ টাকা, সেই সঙ্গে ভ্যাট ১৫ শতাংশ। বাকিটা এমএফএস প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ। কিন্তু এর বিপরীতে হাজারে ১৮.৫০ টাকা করে ক্যাশ-আউট চার্জ নিয়ে অন্য অপারেটরগুলো দেদার মুনাফা করছে।
খরচগুলোকে সামান্য কমিয়ে ভ্যাট বাদে ‘নগদ’ নিচ্ছে ৯ টাকা ৯৯ পয়সা। এরপরও তারা এখান থেকে আয় করছে।
আলোচনা সভায় সিপিবির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, মোবাইল রিচার্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।