ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শীত আসতে না আসতেই ধরা পড়ছে দেশি প্রজাতির মাছ। বাজারেও সরবরাহও বেশি। তাই কমেছে দাম। এতে স্বস্তি আর আফসোস দুটোই আছে।
এর কারণ, সবজির ঊচ্চমূল্য। ক্রেতারা বলছেন, সব মাছ ভুনা বা ভাজি করে খাওয়া যায় না। সবজির সঙ্গে রান্না করলেই কিছু মাছের স্বাদ হয় মুখরোচক। তবে চলতি মৌসুমে আনাজ-তরকারির দাম নিম্ন বা মধ্য আয়ের মানুষের জন্য তৈরি করছে বাড়তি চাপ।
এ কারণেই আফসোস করছেন বহুজন।
এই যেমন সালমা বেগম। মাছ কেনা শেষে হাসি মিইয়ে গেল সবজির দোকানে গিয়ে। বলেন, ‘দেশি প্রজাতির মাছ নিচ্ছি কিন্তু সবজির দামের কারণে হতাশায় পড়ে যেতে হয়। সবজি ছাড়া কি মাছ ভালো লাগে?’
জেলা শহরের আনন্দ বাজার, ফারুকী বাজার, মেড্ড বাজার, কাউতলী বাজার, বৌ-বাজারে গেলেই চোখে পড়ে ডালা ভর্তি শিং, কৈ, মাগুর, টেংরা, টাকি, শোল, বোয়াল, পুঁটি, গড়ার, খালিসা, ভেদা।
এক কেজি মাছ পাওয়া যাচ্ছে সর্বনিম্ন ১০০ টাকাতেও। কেবল শীত মৌসুমে পানি শুকিয়ে এলে ধরা পড়ে এই মাছগুলো। তখন এমন দামে পাওয়া যায়।
মৌসুম ছাড়া এগুলোর দাম থাকে বেশ চড়া। তখন ২৫০ থেকে শুরু করে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আনন্দ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মিজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শীত আস্তে আস্তে ডুকতাছে (ঢুকছে)। তিতাস নদীর ফানিসহ (পানি) হাল (খাল)-বিল, পুশকুনি (পুকুর)-ডোবা হুহায়া (শুকিয়ে) গেছেগা। ইলিগা (এই জন্যে) প্রচুর দেশি ধরা পড়তাছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাঝখান দিয়া ইলশা ধরা বন্ধ কইরা দিলে তহন (তখন) দেশি মাছের দাম মেলা (অনেক) ছিল। অহন (এখন) কম হইয়া (হয়ে) গেছে। নাসিরনগর, আখাউড়া, সরাইলসহ হাওর এলাকা থেইক্কা (থেকে) অনেক মাছ আইতাছে। ইলিগা (এই জন্য) মাছেরও কম দাম আর ব্যাফারিরাও (ব্যবসায়ীরাও) ল-সে (লোকসানে) নাই।’বাজারগুলোতে টেংরা ও ছোট মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। যা কয়েকদিন আগে ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। পুটি মাছ ৩৫০ টাকা থেকে কমে এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি ভেদা ৩০০ টাকা ও মলা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় শিং ৩৫০ টাকা, ছোট শিং ৩০০ টাকা ও কৈ ৩২০ টাকা, বড় শোল ও গজার ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছের সরবরাহ বৃদ্ধিতে চাষ করা পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়ার দাম কেজিতে ১৮০ টাকা থেকে কমে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এদিকে শুক্রবার সকালে আনন্দ বাজারে মাছ কিনতে আসেন মোশারফন হোসেন নামে এক সরকারি কর্মকর্তা। এ সময় তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন দাম কম থাকায় প্রতিদিন বেশি করে দেশি মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। সারা বছরই চাষের মাছ খেতে হচ্ছে। সুযোগ পেলে দেশি মাছের স্বাদ গ্রহণ করাও অনেক জরুরি।’
শীতের আমেজ পড়লেও সবজির দাম এখনও চড়া। শহরের বাজারগুলোতে শিম মিলছে কেজিতে ১৪০ টাকা করে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, ধনিয়াপাতা ২৩০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, ফুলকপি ১২০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, করলা ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।সবজি কিনতে আসা সালমা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খুবই অল্প অল্প করে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছি। সবজির দামে এখনও কোনো তফাৎ নেই। আগে তো দেখেছি শীতের শুরুতেই সবজির দাম অনেকটা হাতের নাগালে থাকত কিন্তু এ বছর তা পুরোপুরি উল্টো।’
স্বল্প আয়ের মানুষ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘আনাজ তরহারিত তো আতই দেয়া যায় না। মেলা দিন দইরা আন্ডা (ডিম) আর ডাইল দিয়া দিন পার করছি। সরহারের কিছু একটা করা দরহার।’কেন কমছে না সবজির দাম?
এ প্রশ্নের জবাবে ফারুকী বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহন মিয়া জানান, ভারী বৃষ্টি, বন্যা ও জমিতে পানি ওঠার কারণে বাজারগুলোতে সবজির সরবরাহ অনেকটা কম। তবে সরবরাহ বেড়ে গেলে দামও হাতের নাগালে চলে আসবে।