জনগণকে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে প্রতিবছর আয়কর মেলার আয়োজন করে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর তা হচ্ছে না।
মেলা না হলেও কর সেবার সব কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
বৃহস্পতিবার সেগুনবাগিচায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে রাজস্ব আদায়ে গতি ফিরছে। চলতি অথর্বছরের শুরুতে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। সেই অবস্থা থেকে ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজস্ব আয় বেড়েছে (প্রবৃদ্ধি) ১ দশমিক ১৪ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, আলোচ্য অর্থবছরের চার মাসে ৮৭ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ৬৬ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। ঘাটতি ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় আয়কর দিবস এবং ২০১০ সাল থেকে আয়কর মেলার আয়োজন করে এনবিআর। আগে ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার রিটার্ন দাখিলের শেষ সময়।
নানা কারণে বার বার এ সময় বাড়ানো রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোর মতো একটি নিদির্ষ্ট দিনে আয়কর রিটার্ন জমার সময় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান সরকার ।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন জমার সময় নির্ধারণ করা হয়, যা তিন অর্থবছর আগে থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, করোনা পরিস্থির মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানো হবে কিনা? জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘না’।
এর কারণ ব্যাখা করে তিনি বলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের রিটার্ন জমা দেয়ার আইনি বাধ্যকতা রয়েছে। ফলে ওই সময়ের পর সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
কর বিভাগের কর্মকর্তরা বলেন, ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরে প্রত্যেক কর অঞ্চলের কার্যালয়ে রিটার্ন গ্রহণ, টিআইএন প্রদানসহ এ সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা দেয়া হবে। এ কাজে কর্মকর্তরা সহায়তায় করবেন করদাতাদের। এর জন্য কোনো ফি বা চার্জ নেয়া হবে না। এ ছাড়া সরকারি চাকিরজীবীদের জন্য সচিবালয় এবং ঢাকা সেনানিবাসে তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে ।
এনবিআর কর্মকর্তরা জানান,প্রচলিত প্রথার পাশাপাশি অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইলের মাধ্যমে আয়কর পরিশোধ করতে পারবেন করদাতারা।
অনলাইেন রিটার্ন জমা দেয়া যাবে না
এনবিআরের কর্মকর্তরা বলেন, এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম করপোরেশন নামে ভিয়েতনামের একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার সফটওয়্যারটি তৈরি করেছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনলাইনে রিটার্ন জমার লিংকটি বন্ধ রয়েছে। তাই করদাতারা রিটার্ন দিতে পারছেন না ।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, সফটওয়্যারে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা সমাধানে বর্তমানে একটি কমিটি কাজ করছে। কাজ সম্পন্ন হতে আরও সময় লাগবে। তাই এবার অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারবেন না করদাতারা ।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অটোমেশনের নামে বাইরের প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা যে কাজ পারি, সেটা দেয়া হচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে। কেন এটা করা হচ্ছে তা আমার জানা নেই।‘
এর দায় কে নেবে জানতে চাইলে জবাবে বলেন,এনবিআরের দায় আমি কেন নেব ? অন্য সংস্থা নির্ধারণ করুক।