করোনার ধাক্কায় ভারতের অর্থনীতি কার্যত তলানিতে। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বড়সড় ধস নেমেছে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও জিডিপি সংকোচন হবে বলে মনে করছে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার ডেপুটি চেয়ারম্যান মাইকেল পাত্রের নেতৃত্বে অর্থনীতিবিদদের একটি দল।
শুধু তাই নয়, ইতিহাসে এই প্রথমবার ভারতীয় অর্থনীতিতে মন্দা গ্রাস করতে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থনীতিতে পরপর দুবার বা তারও বেশি ত্রৈমাসিকে যখন জিডিপির হার পড়ে যায়, তখন তাকে 'প্রযুক্তি মন্দা' বলে বর্ণনা করা হয়।
সেই অনুযায়ী, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে যদি আরবিআই-এর অনুমান সত্য হয়, তাহলে কার্যত দেশে আর্থিক মন্দার সম্ভাবনা থাকছে। অর্থনীতিবিদদের টিম ‘নাউকাস্ট’ নামে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করেছে, যাতে ওই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
পরিসংখ্যান এবং কর্মসূচি রূপায়ণ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্যে জানানো হয়েছিল, চলতি অর্থবর্ষের (২০২০-২১) প্রথম ত্রৈমাসিকে লকডাউনের জেরে জিডিপির হার নেমে দাঁড়িয়েছিল ২৩ দশমিক ৯ শতাংশে।
সেই ধাক্কার পর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে রিজার্ভ ব্যাংকের ধারণা, জিডিপি সংকোচন হতে পারে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে শুরু হয়েছিল আনলক। আশা ছিল আনলক পর্বে অন্তত ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। কিন্তু সে গুড়ে বালি। রিজার্ভ ব্যাংকের এক বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের ত্রৈমাসিকেও সম্ভবত বৃদ্ধির বদলে সংকুচিতই হতে চলেছে জিডিপি।
এর অর্থ ইতিহাসে এই প্রথমবার সরকারিভাবে মন্দায় প্রবেশ করবে ভারত। যদিও সরকারিভাবে রিপোর্টটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। আগামী ২৭ নভেম্বর তা প্রকাশিত হওয়ার কথা।
বৃহস্পতিবার সমীক্ষার খবর প্রকাশ্যে আসতেই সেটিকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর দাবি, ‘ইতিহাসে প্রথমবার মন্দা শুরু হল দেশের অর্থনীতিতে। প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন পদক্ষেপ ভারতের আসল শক্তিকেই তার দুর্বলতায় পরিণত করেছে।’
তবে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে দেশের অর্থনীতি আবার তেজি হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে সমীক্ষায়। এর আগে এই ব্যাপারে যে সময়সীমার কথা বলেছিলেন আরবিআই-এর গভর্নর শক্তিকান্ত দাস, সমীক্ষা রিপোর্ট জানিয়েছে তার আগেই হবে আর্থিক বৃদ্ধি। রিপোর্ট এও জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশে ব্যাংকে নগদ জমার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে জুনে যা দেশের জিডিপির ৭ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল, তা বেড়ে গিয়ে এ বছরের ওই সময়ে হয়েছে ২১ দশমিক ৪ শতাংশ।
অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে দাঁড় করানোর জন্য মূলত রিজার্ভ ব্যাংকের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে সরকারকে। অর্থমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী সে অর্থে বিশেষ কোনো কার্যকর নীতিই গ্রহণ করতে পারেন নি। কেন্দ্র যে তথাকথিত প্যাকেজের কথা বলছে, সেটি মূলত ঋণসর্বস্ব, যার সুবিধা সরাসরি সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। আর সাধারণ মানুষ সরাসরি সুবিধা না পেলে আর যাই হোক, অর্থনীতির দৈন্যদশা ঘুচবে না।