শেখ শাফায়াত হোসেন, ঢাকা
করোনাভাইরারের মধ্যেও ব্যাংকগুলো শাখা সম্প্রসারণ করছে। অধিকাংশ ব্যাংক দেশব্যাপী নতুন শাখা চালু করছে। তবে পল্লি এলাকার শাখা খোলার প্রবণতা কম। ফলে শহর ও পল্লি এলাকার শাখার ব্যবধান সম্প্রতি কিছুটা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক মোট ৬২টি নতুন শাখা চালু করেছে, যার মধ্যে ২০টি খোলা হয়েছে পল্লি এলাকায়। গত বছরের একই সময়ে নতুন চালু হওয়া শাখার সংখ্যা ছিল ৭৪টি। সেই হিসেবে এ বছর শাখা খোলার হার কমেছে ১৬ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর শেষে দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মোট শাখার ৪৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ ছিল পল্লি এলাকায়। বাকি ৫২.৫৩ শতাংশ শহরে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংক খাতের সঙ্গে যুক্ত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া আর্থিক অন্তর্ভূক্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গ্রামে ও শহরে সমান হারে শাখা খোলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান। এর পর থেকে পল্লি এলাকায় ব্যাংকের শাখা বাড়তে থাকে।
গত জুন পর্যন্ত তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে গচ্ছিত আমানতের প্রায় ২১ শতাংশ এসেছে পল্লি এলাকা থেকে। ওই সময় পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে খোলা হিসাব সংখ্যা ছিলো প্রায় ১১ কোটি ১৭ লাখ। হিসাবগুলোতে আমানত ছিল মোট ১২ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা।
গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ব্যাংক শাখার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬৩০টিতে। এর বড় অংশ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা ব্যাংকের সেবা বাড়িয়ে চলেছি। এজেন্ট ব্যাংকিংসহ প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিংয়ে জোর দিচ্ছি। সম্প্রতি আমরা জীবন বিমা করপোরেশন ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করি তাদের অর্থ সংগ্রহ করে দেওয়ার জন্য।’
তবে করোনাকালে অর্থনীতি স্থবির থাকায় ব্যাংকগুলোর মুনাফায় কিছুটা প্রভাব পড়তে দেখা যায়। কিছু কিছু ব্যাংক ব্যতিক্রম। এই সময়েও তারা মোটামুটি মুনাফা করেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পরপর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ব্যাংকের কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়লে গত মার্চ মাসের পর শাখা সম্প্রসারণের কাজ একরকম বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত এপ্রিল ও মে মাসে নতুন করে একটি শাখাও চালু করেনি ব্যাংকগুলো। জুন মাসে নতুন শাখা চালু হয় ৫টি। জুলাই ও আগস্টে ৯টি করে নতুন শাখা চালু হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে ১৬টি নতুন শাখা চালু হয়।
সবশেষ গত বৃহষ্পতিবার এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক তাদের ৭৭তম শাখা খোলে কিশোরগঞ্জে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, করোনায় ব্যাংক এক দিনের জন্যও বন্ধ ছিল না। সাধারণ ছুটির মধ্যেও সীমিত আকারে লেনদেন চালু ছিল। এখন সব ব্যাংকই পুরোদমে কাজ করার চেষ্টা করছে।
তথ্য ঘেটে দেখা যায়, নতুন শাখা চালুর ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো।
চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকগুলো ২ হাজার ২৫৯জন এজেন্ট নিয়োগ দেয় এবং নতুন এজেন্ট আউটলেট চালু হয় ২ হাজার ৬৯২টি।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৮ জন এজেন্ট নিয়োগ দেয় ব্যাংক। আউটলেট চালু হয় ২ হাজার ৪৬০টি।