যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন জয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ।
বাণিজ্য বিষয়ে জো বাইডেন সরকারের নীতি কী হবে? স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে কী ধরনের বাণিজ্য সুবিধা দেবে? অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি বাংলাদেশ কতটুকু পাবে? এসব বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে ব্যবসায়ী মহলে।
ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, হোয়াইট হাউজে কে বসছেন, বাংলাদেশের জন্য তা খুব একটা চিন্তার বিষয় নয়। কারণ দুই দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং রিপাবলিকান পার্টির নীতি অভিন্ন। ফলে বাণিজ্য নীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে মনে করেন তারা।
তবে নতুন সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার। যদিও এক দশকের বেশি সময় ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। জিএসিপর বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান চান তারা। জো বাইডেন এসব বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশর রফতানি বর্তমানের চেয়ে অনেক বাড়বে এবং দু দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও মধুর হবে বলে জানান তারা।
গত ৩ নভেম্বর নির্বাচেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইেডন বিজয়ী হন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন তিনি।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বাংলাদেশর বড় অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি পোশাক পণ্যের সবচেয় বড় বাজার আমেরিকা। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের রফতানি হয় দেশটিতে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। এর ৯৮ শতাংশই তৈরি পোশাক।
প্রতিযোগিতা করে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশ করে আমেরিকার বাজারে। রফতানি বাড়াতে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের দাবি করে আসছে বাংলাদেশ। আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের অনেক দেশকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ সুবিধা দিলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তা পায়নি।
তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন হলেও নীতির পরিবর্তন হয় না যুক্তরাষ্টে। ফলে বাণিজ্যর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমাদের প্রত্যাশা, শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার। এ সুবিধা পেলে বাংলাদেশের রফতানি বর্তমানের চেয়ে অনেক বাড়বে।’
ওবামা সরকারেরর আমলে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে টান্সপ্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তিতে আসিয়ান দেশগুলোর জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু চুক্তিটি কার্যকর করে যেতে পারেননি ওবামা। পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে বাতিল করে ওই চুক্তি।
বাংলাদেশি পোশাক রফতানিকারকরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে আছেন। বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম পারভেজ চৌধুরী বলেন, বাইেডন সরকার চুক্তিটি কার্যকর করলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ তখন আসিয়ানভুক্ত ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ অন্যান্য দেশ বিনা শুল্কে যুক্তরাষ্ট্র পণ্য রফতানি করতে পারবে। আর বাংলাদেশকে শুল্ক দিয়ে ঢুকতে হবে। এতে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে বাংলাদেশ।
তিনি মনে করেন, আমেরিকার কাছ থেকে শুল্ক ও কোটা সুবিধা পেতে হলে বাংলাদেশকে দরকষাকষির (নেগোসিয়েশন) দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। এটাতে এখনও দুর্বল অবস্থানে বাংলাদেশ।
২০১৩ সালে ওবামা প্রশাসনের সময় বাংলাদেশকে দেওয়া অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ওই সুবিধা বাংলাদেশের জন্য তেমন কোনো সুবিধা বয়ে আনবে না। কেননা জিএসপির আওতায় বাংলাদেশর মোট রফতানির মাত্র ৩ শতাংশ যায় আমেরিকায়। এ ছাড়া, বাংলাদেশের প্রধান রফতানিযোগ্য পণ্য পোশাক ও টেক্সটাইল জিএসপির তালিকায় নেই। ফলে নতুন সরকারের কাছে বাংলাদেশের একমাত্র দাবি পোশাক পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা আদায়।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মঞ্জর আহমেদ বলেন, একতরফাভাবে বাংলাদেশকে কিছু দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে দরকষাকষি করে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধার দাবি আদায় করতে হবে।