বাঙালির রান্না মানেই নানান মসলার সমাহার। তবে ভেজালের বাজারে মসলা নিয়েও তৈরি হয়েছে বহু সংশয়। আবার মানহীন মসলা নিয়েও বিপাকে পড়েন অনেকে।
ভালো মসলা চেনা যাবে কীভাবে- সেই প্রশ্ন নিয়ে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বিক্রেতাদের কাছে গিয়েছিল নিউজবাংলা।
তারা বলছেন, খোলাবাজার থেকে গুড়া মসলা কিনলে ঠকার সম্ভাবনাই বেশি। এমনকি অনভ্যস্ত মানুষ প্যাকেটের গুড়া মসলাতেও পান না খাবারের আসল স্বাদ।
এসব ব্যবসায়ী জোর দিচ্ছেন সেই সনাতনি বাটা মসলায়।
তবে তাতেও রয়েছে জটিলতা। ভালো মানের মসলা বেটে নিয়ে রান্না উনুনে চড়ালেই মিলবে খাবারের আসল স্বাদ।
কারওয়ানবাজারের পাকা মার্কেটের বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক নুর হোসেন জানিয়েছেন সবচেয়ে ভালো হলুদ বেছে নেয়ার উপায়।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাজারে সাধারণত চার ধরনের হলুদ বেশি পাওয়া যায়। তারমধ্যে, বাংলাদেশের জাত দুটো আর ভারতের আছে দুটো। বাংলাদেশের একটা হইলো বগুড়ার সাদা হলুদ, আরেকটা চিটাগাংয়ের গুইমারি হলুদ। ইন্ডিয়ান একটা ছড়ি, আরেকটা হইল মুতা। সবচেয়ে ভালো হয় বগুড়ারটা যদি চিন্না নিতে পারেন, যেটারে বলে সাদা হলুদ।’
কেমন সেই সাদা হলুদ- জানতে চাইলে নুর হোসেন বলেন, ‘সাদা হলুদের উপরের অংশটা সাদা, মাঠ থেকে একদম ডিরেক্ট আসে। কোনো পলিশ করে না। তাই আলগা কোনো রঙ নাই। এইটা ভাঙলে একটা দুইটা টুকরা হইব। এর বেশি টুকরা হইব না। ঠাস কইরা ভাইঙ্গা যাইব দেখবেন। উপরে সাদা হইলেও ভেতরে কিন্তু কালচে হলুদ রঙ। সাইড দিয়ে আর মাঝখানে কালা কালা দাগ থাকব। এইটা আসল হলুদ। এটারে কেউ কেউ রংছড়িও কয়।’
চট্টগ্রামের গুইমারি হলুদেও কালো দাগ থাকে। নুর হোসেন বলেন, ‘গুইমারিটাও ভালো। কিন্তু বগুড়ারটা বেশি ভালো। গুইমারিটা পলিশের জন্য মেশিনে নেয়, তখন গুড়াটা গায়ে পইড়া হলুদ হলুদ হইয়া থাকে। তয় ভেতরে কালশে ভাব থাকে।
‘আর ইন্ডিয়ান দুইটা দেখবেন উপর দিয়াই কড়া হলুদ, ভাঙতে গেলে একাধিক টুকরা হয়। ভেতরেও কড়া হলুদ। কালা কালা কিছু নাই। দেখতে এটা সুন্দর। কিন্তু ভালা না। স্বাদ পাইবেন না।’
হলুদ তো গেল, এবার খাঁটি মরিচের গুড়া চেনার পালা।
কারওয়ানবাজারেরই হাসিনা মার্কেটের শরীয়তপুর ভাণ্ডারের মালিক রাসেলের কাছে নিউজবাংলা।
তিনি বলেন, ‘মরিচের গুড়া দেইখা বোঝা যায় না সেইটা আসল নাকি নকল। কারণ, যারা মানহীন মরিচের গুড়া বেঁচে, তারা রঙ মিশায়ে বেঁচে। খালি চোখে দেইখা ধরতে পারবেন না। ’
‘এখন বলতে পারেন, মুখে নিয়ে স্বাদ দেখে বোঝা যায় কিনা! এইখানেও একটা কথা আছে। মরিচের ভালা-মন্দ আসলে কে কী রকম ঝাল খায় তার উপর ডিপেন্ড করে। কিন্তু, রান্নার সময় টের পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ গুড়া দেয়ার পরেও যদি দেখেন রঙ আর ঝাল মিলতেছে না, তখন বুঝবেন ভেজাল আছে। তাই আস্ত মরিচ দেখে শুনে কিনে সেটা ভাঙায়ে নেয়া উচিত।’
ভালো মশলা চিনতে না পারার কারণে অনেকেই দোকানিকে ভরসা করে মশলা কেনেন।
শুকনো মরিচ কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী সায়েদা বানু। দোকানের সামনে বস্তায় রাখা ৫/৬ রকমের মরিচ।
কোনটা ভালো মরিচ বোঝেন কীভাবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দোকানিরে বলি যেটা ভালো সেটা দেন। দোকানি যেটা দেয় সেটাই নিয়া যাই।’
পাকা মার্কেটের বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, ‘শুকনা মরিচ তিন-চার রকমের আছে। এরমধ্যে ভারতের কেরালার আছে সেটারে তেজি বা কারেন্ট মরিচ বলে। এটার ঝাল সবচেয়ে বেশি। দেখতে চিকন চাকন। এই কারেন্টের মধ্যেই আবার দুই জাত। একটা টকটকা লাল, আরেকটা কালচে লাল। টকটকা লালটা বেশি ভালা। ভাঙাইলে একদম ফ্রেশ গুড়া পাওয়া যায়।
‘আরেকটা আছে দেশি। এটা মিডিয়াম ঝাল। এইটাও খারাপ না। তয় মিষ্টি একটা আছে ইন্ডিয়ান। দেখতেই মোটা মোটা। ঝাল কম, মিষ্টি বেশি। ’
আবুল কালাম সতর্ক করে বলেন, ‘যে জাতের মরিচই হোক, যেগুলার অর্ধেক অংশ সাদা হইয়া আছে, সেগুলান নিবেন না। অরিপক্ক অবস্থায় শুকানোর জন্য এর ঝাল একেবারেই নাই।’
ভালো জিরা কেনার জন্যও আছে কিছু কৌশল।
কাওরানবাজারের ফরিদপুর বনিয়াতি স্টোরের মালিক রহমান মুন্সি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাঁচা জিরা যেটা পাতলা, চিকন সেটা ভালো। গোল করে ভারী একটা আছে সেটা ভালো না। স্বাদ নাই।’
তেজপাতার ক্ষেত্রে সাইজে ছোট দেশি তেজপাতা কেনার পরামর্শ রহমান মুন্সির।
দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ কেনার কৌশল শিখিয়েছেন কিচেন মার্কেটের হক মসল্লা বিতানের মালিক আব্দুস সাত্তার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দারুচিনি কিনে জেতার চেনার সহজ উপায় হচ্ছে, পাতলা দেখে কেনা। মোটা দারুচিনি ভালো না। প্রয়োজনে একটু কামড় দিয়ে দেখতে পারেন। ভালোটা প্রথমে ঝাঁঝালো ঝাল, পরে মিষ্টি লাগবে। ’
তার মতে ‘এলাচ কিনবেন একটু বড় সাইজের, সবুজ সবুজ দেখতে। একটু হাতে নিয়ে ফাটায় দেখবেন। ভালোটা টিপ দিলেই ফেটে যাবে, ভেতরে দানা বেশি থাকবে। দানাগুলা কালো কালো থাকবে। মানে হইলো এটা পরিপক্ব। এটা থেইকা যে গন্ধ আসবে সেটা অপরিপক্বগুলাতে পাবেন না। অপরিপক্বগুলাতে দানা কম, দানা সাদা সাদা। টিপ দিলেও ভাঙবোনা।
‘লবঙ্গ দেখবেন মাথার মধ্যে ফুল আছে। যেগুলার মাথায় ফুল আছে এগুলা ভালো।’