একটা সময় ছিল মানুষ পকেটভর্তি টাকা নিয়ে বাজারে যেত। আর ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে বাসায় ফিরত। এখন মানুষ ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে বাজারে যায়, আর পকেটভর্তি বাজার নিয়ে ফেরে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে এটি একটি চালু প্রবাদ। কিন্তু এই প্রবাদ ফিরে ফিরে আসে মূল্যস্ফীতির কালে। এবারও ফিরে এসেছে।
বাজারে লাগামহীন বাড়ছে পণ্যের দাম। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, সে অনুযায়ী বাড়ছে না মানুষের আয়। এ কারণে জীবনযাপনে দুর্ভোগ বাড়ছে। বিশেষত, গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে।
সব দেশের সরকারের জন্যই মূল্যস্ফীতি মাথাব্যথার কারণ। মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি হলে সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যহত হয়। এ কারণে সব দেশের সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক থাকে। বাংলাদেশ সরকারও চেষ্টা করছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের। কিন্ত ঠিকমতো পারছে না।
একটি নির্দিষ্ট সময়ের তুলনায় আরেকটি নির্দিষ্ট সময়ে সামগ্রিক দামের স্তরের যে পরিবর্তন, সেটিই মূল্যস্ফীতি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বেশষ তথ্য অনুযায়ী, গত মাস অর্থাৎ অক্টোবর শেষে মূল্যস্ফীতির গড় হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে, গত বছরের এই সময়ে একটি পণ্যের দাম ১০০ টাকা হলে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ টাকা ৪৪ পয়সা।
দেশে মূল্যস্ফীতির এই হার গত ছয় বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৪ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি (৬ দশমিক ৬০ শতাংশ) ছিল। মূলত চাল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। ফলে পণ্যমূল্য বিশেষত খাদ্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে। এ ছাড়া প্রণোদনার টাকা ও প্রবাসী আয় তথা রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় মুদ্রার জোগান বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে মূল্যস্ফীতির সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, উৎপাদন ও মজুদ স্বাভাবিক থাকার পরও পণ্যের দাম বাড়ছে। তার সঙ্গে মুদ্রা সরবরাহও বাড়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। তিনি মনে করেন, এটা সাময়িক। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে নিয়ন্ত্রণে আসবে মূল্যস্ফীতি।
বিবিএস বলেছে, গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়া। অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে সাত দশমিক ৩৪ শতাংশে উঠেছে, যা আগের মাসে ছিল সাড়ে ৬ শতাংশ।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসিন্দা রিকশাচালক আল-আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, করোনার কারণে তার আয় আগের চেয়ে কমে গেছে। রিকশা চালিয়ে মালিকের জমা মিটিয়ে যা থাকে, তা দিয়ে দুর্দিনের বাজারে পরিবার নিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
শুধু রিকশাচালক আল-আমিনই নয়, খেটে খাওয়া দিনমজুর, নির্ধারিত আয়ের মানুষসহ সাধারণ জনগণ মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট।
বর্তমানে বাজারভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা। চাল ও ভোজ্য তেলের দাম চড়া।
শুল্ক প্রত্যাহার, এলসি মার্জিন শিথিলসহ নানা সুবিধা দেয়ার পরও এসব পণ্যের দাম সহনীয় হচ্ছে না। ফলে বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাম ও শহর দুই ক্ষেত্রেই খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশে উঠেছে, যা আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এ ছাড়া গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশে উঠেছে, আগের মাস শেষে ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস থেকেই মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী।