প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে কিছুটা কমলেও সামগ্রিকভাবে এখাতে তেজিভাব দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ করা পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অক্টোবরে ২১১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের মাস সেপ্টেম্বরে আসা রেমিট্যান্সের তুলনায় ১ দশমিক ৮১ শতাংশ কমলেও একক মাস হিসেবে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
গত সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাস হিসেবে এটি এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। গত জুলাইয়ে ছিল একক মাস হিসেবে রেমিট্যান্সের সর্বোচ্চ রেকর্ড, ২৫৯ কোটি ডলার। এর আগে এক মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনও আসেনি।
গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় এ বছর অক্টোবরে রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অক্টোবরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মোট ৮৮২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬৪ কোটি ডলার বা ৪৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬১৬ কোটি ডলার।
গত কয়েক মাস থেকেই দেশে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘যারা কষ্ট করে অর্থ পাঠিয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখছেন দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থবছরের প্রথম তিন মাস যখন অবিশ্বাস্য গতিতে রেমিট্যান্স আসছিল, তখন অনেকই বলতে শুরু করলেন এটা টেকসই হবে না। কর্মীরা তাদের কাজকর্ম বা ব্যবসা গুটিয়ে দেশে ফিরে আসছে। এসব মন্তব্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও তাল দিয়েছিল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করলেও তাদের অনুপ্রাণিত করার বদলে নিরুৎসাহিত করতে শুরু করলাম কীভাবে!
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, সরকার ঘোষিত দুই শতাংশ প্রণোদনা কার্যকরের পর থেকেই রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্সে প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে সরকার।
করোনাভাইরাসে প্রায় ২০ লাখের মতো প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত আসার পরও চলতি ২০২০ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম স্থানে উঠে আসে।
শুক্রবার বিশ্বব্যাংকের সদরদফতর থেকে প্রকাশিত ‘কোভিড-১৯ ক্রাইসিস থ্রু মাইগ্রেশন লেন্স’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ অবস্থানের কথা বলা হয়।
মূলত প্রাতিষ্ঠানিক তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় কোভিডের মধ্যেও রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসবে প্রায় ২০ বিলিয়ন বা দুই হাজার কোটি ডলার। সেই হিসেব চলতি বছরে বাংলাদেশের অন্তর্মুখী রেমিট্যান্সে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি থাকবে বলে আভাস দেয় বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক রেমিট্যান্সের তথ্য পঞ্জিকাবর্ষ ধরে হিসাব করে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থবছর ধরে রেমিট্যান্সের তথ্য প্রকাশ করে।
এক্ষেত্রে পঞ্জিকা-বছরের হিসাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭ হাজার ৬২২ কোটি ডলার, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫ হাজার ৮৫ কোটি ডলার।
এদিকে রেমিট্যান্সে তেজিভাব বজায় থাকায় অক্টোবরে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।